কুলাউড়ার খাসিয়া পুঞ্জিতে পানগাছ কর্তন : থানায় মামলা
কুলাউড়া সংবাদদাতা :
কুলাউড়া সংবাদদাতা : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের নুনছড়া পুঞ্জিতে বসবাসকারী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী খাসিয়া সম্প্রদায়ের রোপনকৃত বেশ কয়েকটি পান জুমের গাছ কর্তন করার অভিযোগে ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুঞ্জির মন্ত্রী (হেডম্যান) ববরিন খাসিয়া বাদী হয়ে অভিযুক্ত লিটন মিয়াকে প্রধান আসামী করে তার সহযোগী আরো ১৪ জনের বিরুদ্ধে কুলাউড়া থানায় গত ২৩ নভেম্বর একটি মামলা (নং-১৭) দায়ের করেন। মামলার আসামীরা হলেন- কর্মধা ইউনিয়নের নলডরী গ্রামের লিটন মিয়া, পূর্ব ফটিগুলি গ্রামের রেনু মিয়া, এলাইছ মিয়া, ফজলু মিয়া, জুনাব মিয়া, আমির আলী, রুপালী মিয়া, নলডরী গ্রামের জাবেদ মিয়া, দুলন মিয়া, তোতা মিয়া, দুদু মিয়া, ফটিগুলি গ্রামের ফরজান মিয়া, পশ্চিম ফটিগুলি গ্রামের সেলিম আহমদ, সেলিম মিয়া (২)।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়- কুলাউড়ার নুনছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতে ছোট-বড় মিলে প্রায় ১৫০ পরিবারের বসবাস। সেখানে বসবাসকারী খাসিয়ারা পান চাষ ও তা বিক্রি করে জীবিকা চালান। ওই পুঞ্জির মন্ত্রী (হেডম্যান) ববরিন খাসিয়ার প্রায় পাঁচ একর জায়গা জুড়ে কয়েকটি পানের জুম রয়েছে। এছাড়া পুঞ্জির অন্যান্য ব্যক্তিদের আরো পানের জুম রয়েছে। এই পান চাষ করতে তাদের অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয়। গত ২১ নভেম্বর শনিবার বিকেল ৩টায় কর্মধা ইউনিয়নের নলডরী গ্রামের বাসিন্দা নানু মিয়ার ছেলে লিটন মিয়ার নেতৃত্বে ২০-২৫ জন লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ববরিন খাসিয়ার মালিকানাধীন পানের জুমে প্রবেশ করে তার পান জুমে প্রায় ৫০০ গাছ কর্তন করে প্রায় ৮ লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন করে।
এছাড়া আরো ২৫-৩০টি পান জুমের পান গাছ কর্তন করা হয়েছে বলে খাসিয়াদের অভিযোগ। এতে তাদের কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে বলে জানান খাসিয়ারা। পান কাটার খবর পেয়ে পুঞ্জির হেডম্যান ববরিন খাসিয়া তাঁর পান জুমে গিয়ে লিটন গংদের পান কর্তনে নিষেধ করেন। তখন লিটন গং দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হেডম্যান ববরিন ও তার পান জুমের পাহারাদারদের প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন।
পুঞ্জিতে পাহারাদারের দায়িত্বে থাকা শাহিন আহমদ, সেলিম মিয়া ও আমজদ আলী বলেন- ঘটনার দিন লিটন গং খাসিয়াদের পান জুমে প্রবেশ করে পান গাছ যখন কাটা শুরু করে তখন আমরা তাদের বাঁধা দেই, কিন্তু তারা আমাদের বাঁধা না মেনে উল্টো প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। পরে বিষয়টি পুঞ্জির মন্ত্রীসহ অন্যান্যদের অবগত করি। এখন আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি, যেকোন সময় রাস্তাঘাটে আমাদের ওপর লিটন গংরা হামলা করতে পারে।
তবে পান গাছ কর্তনের অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে লিটন মিয়া বলেন- আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। আমরা পান গাছ কাটার সাথে জড়িত নই। ঘটনার দিন বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিট অফিসারসহ আমরা কয়েকজন উপকারভোগী নুনছড়া বাঁশমহালটি সরেজমিন দেখতে গিয়েছিলাম।
পুঞ্জির মন্ত্রী ববরিন খাসিয়া বলেন- আমার শ্বশুর জিনুল লামিন ছিলেন এই নুনছড়া পুঞ্জির মন্ত্রী। ১০ বছর পূর্বে তিনি মারা যাবার পর এই পুঞ্জি দেখাশুনা করার জন্য আমাকে হেডম্যানের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। পুঞ্জির সকল পরিবারের সার্বিক বিষয় আমাকে দেখাশুনা করতে হয়। পান চাষ করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু স্থানীয় নলডরী গ্রামের বাসিন্দা লিটন মিয়া, জাবেদ, রেণু মিয়া ও এলাইছ গংরা প্রায় সময় আমাদের জুমে অন্যায়ভাবে প্রবেশ করে পান কর্তন করে আমার প্রায় ৮ লক্ষ টাকাসহ অন্যান্যদের কয়েক লক্ষ টাকা ক্ষতিসাধন করে। অতীতে তাদের পান জুমে একাধিকবার পানের গাছ কর্তন করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুঞ্জির সাধারণ লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। আমাদের পান জুম বিনষ্ট করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে এই চক্রটি। আমরা এ থেকে পরিত্রাণ চাই, ন্যায় বিচার চাই।
আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন (কুবরাজ) সাধারণ সম্পাদক আদিবাসী নেত্রী ফ্লোরা বাবলী তালাং বলেন- শুধু নুনছড়া পুঞ্জি নয় কুলাউড়ার বিভিন্ন পুঞ্জিতে খাসিয়াদের পানের জুম থেকে পান গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির চারা গাছ কর্তন করে দুর্বৃত্তরা। যার কারণে খাসি পান চাষিরা বেশ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। পান চাষ করেই খাসিরা তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। এ বিষয়ে উপজেলা ও পুলিম প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তিনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কুলাউড়া থানার ওসি (তদন্ত) মো. আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন- এ ঘটনায় থানায় খাসিয়াদের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সরেজমিন পুঞ্জিতে গিয়ে পান গাছ কাটার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।