সিলেটে ইআ-ছাত্রলীগে চাপা উত্তেজনা, চরমোনাই পীরের আগমন অনিশ্চিত!
সংবাদ সংগ্রহ :
সংবাদ সংগ্রহ : রাজনৈতিক সংগঠন ইসলামী আন্দোলনের সহযোগী সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি সিলেট বিভাগীয় শাখার উদ্যোগে আগামী ১০-১২ ডিসেম্বর সিলেট আলীয়া মাদরাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হবে ওয়াজ মাহফিল। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করীম চরমোনাই পীরের বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে। প্রতিবছরই এমন আয়োজন করে বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি সিলেট বিভাগীয় শাখা। তবে এবারের ওয়াজ মাহফিল ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সিলেটে মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করীমের আগমন নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের ছাত্র সংগঠন ‘ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন’ ও ছাত্রলীগের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে। এরই মধ্যে সিলেট ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য প্রদানকারী মুফতি রেজাউল করীমের সিলেটে আগমন নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যও করেছেন।
ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করীমের বক্তব্য এবং কুষ্টিয়া ভাস্কর্য ভাঙচুর নিয়ে দেশব্যাপী চলমান অস্থিতিশীল পরিবেশের জের ধরে সিলেটে চরমোনাই পীরের ওয়াজ মাহফিল ঘিরে এ উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। তবে প্রশাসন এ বিষয়ে তীক্ষ্ণ নজরদারি রাখছে বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল সূত্র।
সৃষ্ট উত্তেজনার জেরেই রোববার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে সিলেট ছাত্রলীগের ব্যানারে বের করা একটি মিছিল থেকে নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের পাশে নির্মিত সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম (চরমোনাই পীর)-এর ওয়াজ মাহফিলের জন্য নির্মিত তোরণে লাগানো ব্যানার ছিঁড়ে তাতে অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগ করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান- কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে রোববার সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল করে আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠ থেকে একটি মিছিল শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলটি নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় আসার পর ছাত্রলীগের কর্মীরা চরমোনাই পীরের মাহফিলের ওই তোরণের একটি ব্যানার টেনে নামিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। এছাড়া আরেকটি ব্যানার টেনে ছিঁড়ে ফেলেন।
সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি সেলিম মিঞা এ বিষয়ে বলেন- ‘কয়েকটি ছেলে একটি ব্যানারে আগুন দিয়েছিল। পুলিশ তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।’
এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের সিলেট মহানগর শাখার সেক্রেটারি হাফিজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান সংবাদমাধ্যমকে জানান- আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তোরণের কাপড় ছেঁড়া দেখতে পাই। ব্যানারে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। জানতে পেরেছি ছাত্রলীগের মিছিল থেকে এমনটি করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং এ বিষয়ে জরুরি বৈঠকের মাধ্যমে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবো।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- প্রচারণা শুরুর আগেই প্রশাসনের কাছ অনুমতি নেয়া হয়েছে। আমরা প্রতিবছরই এমন আয়োজন করে থাকি। তবে এবারে দেশব্যাপী চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় জনস্বার্থ বিঘ্নিত হয় এমন কোনো পদক্ষেপ আমরা নেবো না। সিলেটে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে প্রয়োজনে আমাদের মুরুব্বিরা বৈঠক ডেকে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিবেন।
এ বিষয়ে জানতে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের (সর্বশেষ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষারের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল বাছিত রুম্মান বলেন- আমার জানামতে ছাত্রলীগের মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। ছাত্রলীগের মিছিল থেকে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) বিএম আশরাফ উল্যা তাহের সংবাদমাধ্যমকে বলেন- আলিয়া মাদরাসা মাঠের ওয়াজ মাহফিলের অনুমতি নিয়েছেন আয়োজক কমিটি। এরপরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা সার্বিক অবস্থা কঠোরভাবে নজরদারি করছি এবং কোনো ধরণের কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ যাতে তৈরি না হয় সে লক্ষ্যে পুলিশ কাজ করছে। কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিলেই আমরা সময়োপযোগী ব্যবস্থা নেবো।