হাওরের পানি নামছে ধীর গতিতে : দুঃশ্চিন্তায় কৃষক
তাহিরপুর সংবাদদাতা :
হাওর থেকে সময় মত পানি না নামায় বোরো ধান চাষাবাদ নিয়ে উদ্বিগ্ন মাটিয়ান হাওর পাড়ের কৃষক আলী হোসেন। তিনি বলেন- এবারো জমিতে বোরো ধানের আবাদ করব কিন্তু পানি নামছে ধীরগতিতে। অন্য বছর কার্তিক মাসে বোরো আবাদের বীজতলার কাজ শেষ করলেও এবার অগ্রহায়ণ শেষ হতে চললেও হাওরের পানি কেবল নামতে শুরু করেছে। দেরীতে বীজতলার পানি শুকানোর কারনে বীজ বপনও করেছি দেরীতে আর যে পরিমাণ পানি হাওরে আছে এতে করে বোরো ধানের আবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শনির হাওরে বোরো ধান আবাদের জন্য বীজতলা তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষক শাহেনশাহ। তিনি বলেন- গত বছর এসময়ে শনির হাওড়, মাটিয়ান হাওরে বোরো আবাদ শুরু হয়েছিল, কিন্তু এবার তার উল্টো। এখনো হাওড় থেকে পানি নামছে না। যে গতিতে পানি নামছে তাতে হাওরের জমি আবাদ উপযোগী হতে আরোও ১৫ দিন লেগে যেতে পারে।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সব কৃষকরই এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এবার হাওরগুলোর পানি নামছে একেবারে ধীরগতিতে। ফলে বোরো চাষ নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে কৃষকদের। চারদফা বন্যার কারণে এবার হাওরে অনেক বেশি পানি প্রবেশ করেছে। তাই পানি নামতে দেরি হচ্ছে।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন- হাওরের পানি যেন দ্রুত নেমে যায়, সেজন্য জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় হাওর রক্ষাবাঁধের কিছু নির্দিষ্ট জায়গা কেটে দেয়া এবং খালগুলোও খনন করা হচ্ছে। বাঁধ কেটে দেয়ায় দ্রুত পানি নামছে। কৃষকদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই হাওড়ের সব পানি নেমে যাবে কৃষকরাও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বোরো ধান রোপণ করতে পারবেন।
হাওরপাড়ের সচেতন নাগরিক ও কৃষকরা বলছেন- হাওরে অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ ও পানি নামার পথ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি দেরিতে নামায় হাওরের বিভিন্ন অংশে এখনো বীজতলা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। আর যে গতিতে পানি নামছে, তাতে এবার হয়তো বোরো ধান পাকার আগে আগাম বন্যায় তলিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
জেলার তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওড়, মাটিয়ান হাওড়সহ ছোট-বড় ২৩টি হাওড়ঘুরে কৃষকদের কথা বলে জানা যায়- হাওরের পানি ধীরগতিতে নামছে। এই পর্যন্ত উপজেলায় ৯৮০-হেক্টর বীজতলা তৈরী করা হয়েছে। উপজেলায় এবার বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্র ১৭,৫২৭ হেক্টর নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। গত ৩০ নভেম্বর হাওর রক্ষাবাঁধের পিআইসি গঠনের মেয়াদ শেষ কিন্তু এখনো পিআইসি গঠন হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়- সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার ছোট-বড় ৪২টি হাওরে ১২ হাজার ৭ কিলোমিটার ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এ বছর। হাওরে বিভিন্ন উপজেলায় কমর্রত সহকারী প্রকৌশলী ও উপসহকারী প্রকৌশলীদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোডের্র পক্ষ থেকে ২২টি জরিপ টিম প্রি-ওয়ার্ক করছে।
হাওর থেকে পানি যে পরিমানে নামছে তাতে কোন সমস্যা হবে না বলে জানান তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার হাসান উদ দোলা। তিনি আরো জানান- এ বছর আমরা কৃষকদের বীজ, সারসহ সর্বাত্মক সহযোগীতার পাশাপাশি কৃষকদের বোরো আবাদে সার্বক্ষনিক পরামর্শ ও উৎসাহ দিচ্ছি। আশা করি কোন সমস্যা হবে না।