বয়ঃসন্ধিক্ষণে পুষ্টির চাহিদা পূরণে
ফাতেমা সিদ্দিকী ছন্দা

মডেল: সুমাইয়া চৌধুরী। ছবি: সৈয়দ মাহামুদুর রহমান
বয়ঃসন্ধিকাল
সাধারণত ১০-১৯ বছরের বয়সকে কৈশোরকাল বা বয়ঃসন্ধিকাল বলা হয়। এর দুটি পর্যায়:
- কৈশোরকাল (১০-১৩ বছর)
- তারুণ্য (১৪-১৯ বছর)
বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তনগুলো মানসিক, শারীরিক ও সামাজিক। এ সময় পুষ্টির চাহিদা পূরণ জরুরি।
দেশের মোট জনসংখ্যার ২৩ শতাংশ বয়ঃসন্ধিক্ষণের ছেলেমেয়ে রয়েছে। এদের অধিকাংশই সকালের নাশতা না খেয়ে স্কুলে যায় এবং বাসার দেওয়া টিফিন না খেয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। ফলে তাদের ফাস্ট ফুড ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। এ জন্য কিশোর–কিশোরীদের পুষ্টির চাহিদার এক বিরাট অংশ অপূর্ণ থেকে যায়। পূর্ণ পুষ্টির অভাবে যেসব শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে তার মধ্যে রয়েছে:
- বুদ্ধির বিকাশ না হওয়া
- পরিপূর্ণ পুষ্টি বা ক্যালরির অভাবে ওজনাধিক্য বা কম ওজন বা খাটো হওয়া
- অ্যানিমিয়া
- আয়োডিন, ক্যালসিয়াম, জিংক ও ফলিক অ্যাসিডের অভাব
- অ্যাসিডিটি
- পেপটিক আলসার
- অনিয়মিত পিরিয়ড
- ব্রণ হওয়া
- চুল পড়ে যাওয়া
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- রক্তের কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া
মা-বাবার করণীয়
মা-বাবার অন্যতম দায়িত্ব হলো, সকালের নাশতা ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ার গুরুত্বের ওপর সন্তানদের সঙ্গে আলোচনা করা। সন্তানের খাদ্যাভ্যাস নির্ভর করে পরিবার তথা মায়ের ভূমিকার ওপর। জন্মের ছয় মাস পর থেকে সন্তানকে খাবারের পরিমাণ ও সময় অনুযায়ী যতটা ভালো পরিচয় করাতে পারবেন, আপনার সন্তান ততটাই সঠিক জীবনযাপন করতে পারবে। ডায়াটিশিয়ানরা তাই কিশোর ও কিশোরীদের জন্য সকালের নাশতাসহ প্রতিবেলার খাবারের ওপর জোর দেন।
কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টির চাহিদা পূরণে যা করতে হবে :
- প্রতিদিনের খাবারের তালিকা এমন হতে হবে যেন তা অল্প হলেও পুষ্টিচাহিদা পূরণে যথেষ্ট হয়।
- সকালের নাশতা যেন হয় ‘পূর্ণ খাবার’ মানে দানাশস্যের সঙ্গে ডিম, দুধ, ফল বা সবজির সমন্বয় থাকতে হবে।
- কমপক্ষে দুই-তিন রকম সবজি দিয়ে তৈরি খাবার দিতে হবে।
- মৌসুমি মিষ্টি ও টক ফল থাকতে হবে খাবারে।
- ফ্রুট সালাদের সঙ্গে অলিভ অয়েল, লেবু, আয়োডিনযুক্ত লবণ থাকতে হবে।
- মিক্সড বাদাম থাকতে হবে।
- চিকেন ফ্রাই ও সালাদ খেতে দিতে হবে।
- বিচিজাতীয় খাবার, যেমন কুমড়োর বিচি, ছোলা, শিমের বিচি ইত্যাদি রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়।
- খেজুর, কিশমিশ থাকতে হবে।
- নিয়মিত হালকা ব্যায়ামের অভ্যাস করাতে হবে।
- কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টিচাহিদা পূরণে সজাগ থাকলে ভবিষ্যতে দেশ পাবে মেধাবী সন্তান।
লেখক : ক্লিনিক্যাল ডায়াটিশিয়ান ও নিউট্রিশন কনসালট্যান্ট, বেটার লাইফ হাসপাতাল