আজমিরীগঞ্জে আবারও সক্রিয় বালুখেকো চক্র : প্রশাসন নীরব
সময় সংগ্রহ
এনামুল হক মিলাদ, আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকে : হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বালু খেকো চক্র। এবার রাতের আঁধারে নয়, একেবারে দিনে-দুপুরে কালনী নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে চলছে বালু উত্তোলন। এতে করে একদিকে সরকার যেমন হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব অপরদিকে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের বদরপুর, নরজাকান্দা, সৌলরীসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ও ফসলী জমি পড়েছে নদী ভাঙনের মুখে। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কয়েকটি গ্রামের প্রায় অর্ধশত বসতভিটা।
বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) বিকাল ৩ টায় সরেজমিনে আজমিরীগঞ্জ পৌরসভার বাঁশ মহাল সংলগ্ন এলাকার কালনী নদীতে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়।
এদিকে, এভাবে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করা হলেও প্রশাসনের নীরবতায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলা এবং কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার মধ্যস্থল দিয়ে বয়ে যাওয়া কালনী-কুশিয়ারা নদীর উত্তর-পশ্চিম পাড়ের ইটনা উপজেলা এবং পূর্ব-দক্ষিণ পাড়ে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার অংশ। রাতের বেলায় ড্রেজার মেশিনটি ইটনার অংশে নোঙর করা থাকলেও দিনের বেলা পূর্ব-দক্ষিণ পাড়ের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার সীমানা থেকে প্রকাশ্যে চলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। সেই বালু প্রতি ঘনফুট ৮ থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রী হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। এতে সরকার যেমন হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব অপরদিকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ইতোমধ্যে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এরই প্রেক্ষিতে গত ১৫ জুলাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে ভাঙন রোধে প্রায় ৮৯ লক্ষ টাকার জিও ব্যাগ বরাদ্ধ দেয়া হয়।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙনের কবলে ভিটেমাটি। ছবি ; সংগৃহীত
জানা যায়, বিগত ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাঈমা খন্দকার একই জায়গায় অবৈধ বালু উত্তোলনের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ড্রেজার মেশিন চালক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসির নগর উপজেলার ইদ্রিস মিয়ার পুত্র নিয়ামত উল্ল্যাহকে বালু-মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ১৫(১) ধারা অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও ড্রেজার মেশিনের যন্ত্রাংশ পুড়িয়ে দেন। এরপর ১২ ডিসেম্বর ২০২০ সালে সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) উত্তম কুমার দাশ প্রায় ১৮ একর চর অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করেন।
কিন্তু কয়েক মাস বিরতি দিয়ে গত ১২ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রায় ১ কিলোমিটারের দূরত্বে আবারও বালু খেকো চক্রটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। এতে প্রশাসনের নীরব ভূমিকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শফিকুল ইসলাম জানান- এই অংশটি আজমিরীগঞ্জের সীমানার বাইরে। বাঁশমহাল মসজিদ পর্যন্ত আজমিরীগঞ্জের সীমানা। এটি ইটনা উপজেলার অংশ। ইটনা উপজেলার ইউএনও মহোদয়কে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার আলী জানান- আজমিরীগঞ্জের সীমানা রাহেলা গ্রামের আরও অনেক পরে। তৎকালীন সিলেট জেলা ও ময়মনসিংহ জেলার ডিমারগেশন চুক্তি অদ্যাবধি পর্যন্ত বহাল আছে। প্রয়োজনে কাগজ দেখানো হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুলতানা সালেহা সুমীর মুটোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।