‘রোহিঙ্গারা শরণার্থী নাকি বাস্তুচ্যুত তা দিয়ে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত হবে না’
কূটনৈতিক সময়
রোহিঙ্গাদের মর্যাদা শরণার্থী দেওয়া হোক আর জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক বলা হোক, তা দিয়ে তাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত হবে না। এর সমাধান নিশ্চিত করবে মিয়ানমার, কি নামে ডাকা হবে তা এর সমাধান নিশ্চিত করবে না। গত বুধবার (২৫ আগস্ট) নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রোহিঙ্গা বিষয়ক ওয়েবিনারে বক্তারা এমন কথাই বলেন।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি) ‘রিমেমবারিং দ্য রোহিঙ্গা জেনোসাউড অব ২০১৭: ওয়েটিং ফর জাস্টিস’ শীর্ষক ওয়েবিনারের আয়োজন করে। এতে অস্ট্রেলিয়াতে বাংলাদেশ হাইকমিশনার মোহাম্মদ সুফিউর রহমান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব এম শহিদুল হক’সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। ওয়েবিনারে রোহিঙ্গাদের শরণার্থী মর্যাদা না দিয়ে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক বলায় বাংলাদেশ সরকার ভুল নীতি অবলম্বন করেছে বলে প্রশ্ন তোলা হয়।
মোহাম্মদ সুফিউর রহমান বলেন- রোহিঙ্গাদের কি নামে ডাকবেন শরণার্থী নাকি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক, এর মূল বিষয় হচ্ছে শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গারা সম্মানের সঙ্গে মিয়ানমারে ফেরত যেতে পারে কি-না না। রাখাইনে ফেরত যাওয়ার সঙ্গে তাদের শরণার্থী বা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক কি নামে ডাকা হবে তার সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত চূড়ান্ত ফলাফল না আসে, এর কোনো মানে নেই।
অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনার বলেন- এখানে বলা হচ্ছে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নামে ডাকলে তৃতীয় দেশে তাদের পুনর্বাসন করা যাবে। এর কোনো ভিত্তি নেই। কেউ যদি গবেষণা করে দেখে তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের বিষয়ে, তাহলে দেখা যাবে এটি সমস্যার ১ শতাংশও সমাধান করেনি। শরণার্থী বলে ডাকলে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা এবং তাদের সংশ্লিষ্টরা খুশি হবে। এর জন্য তাদের শরণার্থী ডাকার কোনো অর্থ নেই।
মোহাম্মদ সুফিউর রহমান ১৯৭০ সালের আফগানিস্তানের উদাহরণ টেনে বলেন- আফগানিস্তানের নাগরিকদের শরণার্থী মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। তাতে কি তাদের সমস্যার সমাধান হয়েছে, হয়নি। ফলে মর্যাদার বিষয়টির সমস্যা সমাধানের কোনো মানে রাখে না।
এনএসইউ শিক্ষক ইসরাত জাকিয়া সুলতানা বলেন- জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক বলায় কোনো সুবিধা হয়েছে কি না তা আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের শরণার্থী মর্যাদা দেয়নি। কারণ বাংলাদেশ শরণার্থী কনভেনশনে সই করেনি। রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক বলেও শরণার্থীদের মতো সকল সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। আর জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক বলায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সহজ হয়নি। বরং শরণার্থী মর্যাদা দিলে তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের সুযোগ তৈরি হতো।
এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন- দক্ষিণ এশিয়ার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুরো বিশ্বের চোখ এখন আফগানিস্তানের দিকে। এখন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের কি করার রয়েছে। কারণ অন্যান্য পশ্চিমা শক্তির পাশাপাশি চীন ও ভারতও এখন আফগানিস্তানে ব্যস্ত, যারা রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারত। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের এখন কোনো সম্ভাবনা দেখি না। আমাদের কি আর কোনো বিকল্প রয়েছে। আমরা এটি মুখে উচ্চারণ করতে না চাইলেও, হ্যাঁ আমাদের হাতে বিকল্প পথ রয়েছে।
সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের কাছে দ্বিতীয় কোনো পথ রয়েছে কি-না না, তার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন এম শহিদুল হক। তিনি বলেন- সমাধানে বল প্রয়োগের মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। কারণ বল প্রয়োগ পরিস্থিতিকে সমাধানের পরিবর্তে আরও ঘোলাটে করবে। কারণ আমরা চাইব না কাউকে আমাদের প্রতিবেশী দেশে আসার সুযোগ করে দিতে।