সিলেটে তৃণমূলের ভোটে নৌকার কান্ডারি সাবেক শিবির নেতা!
স্টাফ রিপোর্টার

দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সিলেটে সাবেক শিবির নেতাকে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে তোলপাড় চলছে তৃণমূল আওয়ামী লীগে।
চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্র শিবিরের সাবেক নেতা ইকবাল হোসেন ইমাদের নাম থাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ ঝাড়ছেন। এজন্য তারা জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের দোষারোপ করছেন।
গত রবিবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সিলেট’সহ দেশের ৮৪৮ ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করে কেন্দ্র। এরমধ্যে সিলেট বিভাগে সাত উপজেলার ৪৪ ইউপিতে নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়।
সিলেট জেলার ৩টি উপজেলার মধ্যে ১৫টি ইউনিয়নে নৌকার চূড়ান্ত হয়। তন্মধ্যে তুমুল বিতর্ক হচ্ছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রনিখাই ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক উপজেলা সেক্রেটারি ইকবাল হোসেন ইমাদের হাতে নৌকা তুলে দেওয়ায়। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ তৃণমূল আওয়ামী লীগ ও অংগ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
রবিবার রাতে ইকবাল হোসেন ইমাদকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্তের পর যুক্তরাজ্য ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ দেওয়ান তার ফেসবুকে লেখেন- ‘এত এত সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকার পরও নৌকা পেলো শিবিরের সাবেক সেক্রেটারি ইকবাল হোসেন ইমাদ। সে চেয়ারম্যান হোক বা এমপি, তাতে আমার কিছ্ছু আসে যায় না। আমি তাকে চিনি শিবিরের সেক্রেটারি হিসেবে, সারা জীবন তাই জানবো।’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পাড়ুয়া বটেতল গ্রামের বাসিন্দা জাহিদ দেওয়ান ক্ষোভ প্রকাশ করে স্ট্যাটাসে আরও লিখেছেন- ‘কোম্পানীগঞ্জের সবাই জানে, তবুও নীরব। জানি না কোন কারণে সমাজে এই নীতিনৈতিকতার অবক্ষয়।’ ‘অনেকে ম্যাসেজ করেছেন, কি হলো প্রতিবাদ করে, আমি মেনে নিতে পারিনি, তাই প্রতিবাদ করেছি। সারা জীবন করে যাবো-বলতে পারবো-এটা আমার ব্যক্তিত্ব (ইগো)।’
সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গোলাম হাসান চৌধুরী সাজন ও জেলা যুবলীগ নেতা রেজাউল ইসলাম রেজা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেন- ‘তৃণমূল আওয়ামী লীগে পচন ধরেছে। টাকায় বিবেক বিক্রি হচ্ছে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্র শিবিরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন ইমাদ দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী।’
ইমাদ ২০০৬-০৭ সেশনে কোম্পানীগঞ্জ ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি ছিলেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
মনোনয়ন পাওয়ার আগে সাবেক মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন- ‘একটা উপজেলা শিবিরের সাবেক সেক্রেটারি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী!’
এভাবে নৌকা প্রতীকে চূড়ান্ত প্রার্থীদের অনেককে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সিলেটের তৃণমূল আওয়ামী লীগে। এরমধ্যে সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা ইউপিতে মো. মোশাইদ আলী আগে জাতীয় পার্টিতে (জাপা) ছিলেন। মোগলগাওয়ে মো. হিরন মিয়া সাবেক যুক্তরাব্য বিএনপি নেতা। বিগত দিনে তাকে ঘিরে সংবাদ সম্মেলনও করেছিল একটি পক্ষ।
এদিকে, ইমাদকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিগত দিনে সরকার বিরোধী অপতৎপরতার বিষয়গুলো তুলে ধরছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। ২০১৪ সালে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে ‘অধ্যাপক গোলাম আযম, একটি নাম, একটি ইতিহাস’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন ইমাদ। ২০১৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর গাজীপুরে ১৪৪ ধারা জারির বিরুদ্ধে ‘সরকারের অন্যায় সিদ্ধান্ত রুখে দেওয়ার আহ্বান জামায়াত ইসলামীর’-এমন স্ট্যাটাস দেন। এছাড়া ২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ইকবাল হোসেন ইমাদের নেতিবাচক স্ট্যাটাসও সংগ্রহে রেখেছেন ছাত্রলীগ নেতারা।
দলীয় সূত্র জানায়- ২০১৯ সালে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল হাকিমের আশির্বাদপুষ্ট হয়ে কমিটিতে সদস্যপদ পান ইকবাল হোসেন ইমাদ। মাত্র দুই বছরের মাথায় ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী হতে তৎপর চালান তিনি।
এর আগে দলের অভ্যন্তরীণ কাউন্সিলে ২০টি ভোটের মধ্যে ১১ ভোট পেয়ে প্রাথমিকভাবে নৌকার প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে যান ইমাদ। জেলা আওয়ামী লীগও তাকে নৌকা দিতে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠায়।
আওয়ামী লীগের নৌকায় ওঠার পেছনে শিবির নেতা ইমাদ নেতাকর্মীদের পেছনে মোটা অংকের টাকা ব্যয় করেছেন-এমন অভিযোগ তৃণমূলের। স্থানীয়ভাবে ইটভাটার মালিকানা থাকায় অনেক নেতার বাড়ি তৈরির জন্য তিনি বিনা পয়সায় ইটও দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খলিলুর রহমান বলেন- ‘ইকবাল হোসেন ইমাদ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি ছিল। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ম্যানেজ করেই দলের মনোনয়ন পেয়েছে।’
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন- ‘ইকবাল হোসেন ইমাদ শিবিরের নেতা ছিলেন, ফেসবুকে অনেকে দেখালেও বাস্তবে প্রমাণ হাজির করতে পারেননি। তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ কেন্দ্রেও দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় অভিযোগ করেনি। কেবল প্রতিদ্বন্দ্বীরা অভিযোগ করেছেন। কেন্দ্রও সেসব অভিযোগ আমলে না নিয়ে তাকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছে। তাছাড়া সে এলাকায় জনপ্রিয়। সে বিবেচনা থেকে তাকে নৌকার চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন- ‘এর আগে সে অন্য দল করলেও করতে পারে। এরকম অভিযোগ অনেকের বিরুদ্ধেই ওঠে। সে মাঠ পর্যায়ে সে শক্তিশালী একজন প্রার্থী। বিগত দিনে করোনাকালে মানুষকে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করেছে। যে কারণে তার পাস করার সম্ভাবনা রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জের রণিখাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল হাকিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সূত্র : বাংলা নিউজ




