আশ্বিনেও কেন এত গরম
স্টাফ রিপোর্টার
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ থাকায় গরম অনুভূত হচ্ছে। নিম্নচাপের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, জলীয় বাষ্প ও মেঘ থাকে বেশি। বাতাসে সুপ্ত তাপ বেশি থাকে এবং গরম বেশি অনুভূত হয়।
মনোয়ার হোসেন আরও বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এখন বাংলাদেশ অতিক্রম করছে। দেশে বিরাজ করার সময় সাগর থেকে তা মেঘ নিয়ে এসেছে। কিন্তু তা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়েনি। এ কারণে সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠে এলেও মেঘের কারণে তা ওপরের দিকে ফেরত যেতে পারছিল না, অর্থাৎ আটকে ছিল। কয়েক দিন ধরে সারা দেশেই তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে।
গত এক সপ্তাহের আর্দ্রতার পরিসংখ্যান বলছে, পুরো সময়ই বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনার দু-একটি জায়গায় খুব সামান্য বৃষ্টি ছাড়া কোথাও তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি।
১২ অক্টোবর সকাল নয়টার দিকে বাতাসে আর্দ্রতা ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, সেদিন ঢাকা বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ আর্দ্রতা ছিল গোপালগঞ্জে, ৮৩ শতাংশ। অন্যান্য জায়গার মধ্যে সর্বোচ্চ আর্দ্রতা ছিল নেত্রকোনায় ৮০, ফেনীতে ৯৩, শ্রীমঙ্গলে ৭৭, বদলগাছীতে ৮৭, সৈয়দপুরে ৮০, কুমারখালীতে ৮২ ও ভোলায় ৮৪ শতাংশ।
আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ শাহীনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শীতের সময় আর্দ্রতা ৮০ শতাংশ পর্যন্ত থাকলেও ঠান্ডা লাগে। কিন্তু গরমের সময় ৬০ শতাংশ আর্দ্রতায়ও প্রচণ্ড গরম লাগে। কারণ, একে তো তাপমাত্রা বেশি থাকে, তার ওপর ঘাম না শুকানোয় গরম লাগে আরও বেশি।
এ ছাড়া সপ্তাহখানেক ধরে সারা দেশে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা। গরম লাগার এটিও একটি কারণ।
৮ থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত তাপমাত্রার তুলনা করে দেখা যায়, স্বাভাবিকের চেয়ে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা ছিল সিলেটে। তাপমাত্রা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৮ থেকে ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেশি ছিল তখন।
আবার ১১ অক্টোবর সিলেটের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন এই অঞ্চলে স্বাভাবিক তাপমাত্রা হওয়ার কথা ৩০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
একই দিন ফেনীর তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি, ময়মনসিংহে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজশাহীতে ২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, খুলনায় ২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বরিশালে ৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
একইভাবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সারা দেশের ৪৩টি পর্যবেক্ষণাগারের সব কটিতেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে বৃষ্টি থাকলে তাপমাত্রা সহনশীল থাকে। আর বৃষ্টি না থাকলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। একনাগাড়ে বৃষ্টি না হলে এই গরম কমে না।
মোহাম্মদ শাহীনুল ইসলাম আরও বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ু অক্টোবরের শেষার্ধের প্রথম দিকে বাংলাদেশ থেকে পুরোপুরি বিদায় নিতে পারে। এর সঙ্গে সঙ্গে শীতের আগমনী বার্তা শুরু হবে।
আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুসারে, আজকের পর সারা দেশেই কমবেশি বৃষ্টি হবে। তখন তাপমাত্রা কমতে পারে।