ফুল ফ্রি স্কলারশিপ দিচ্ছে সৌদি আরবের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মদীনা
প্রকৌশলী মুহাম্মদ আলতাফ হোসাইন
মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্র নগরী মক্কা ও মদীনা। একবারের জন্য হলেও মক্কা ও মদীনায় যাওয়া পৃথিবীর সকল মুসলমানেরই স্বপ্ন। হৃদয়ের সকল আবেগ উজাড় করে দিয়ে পবিত্র কাবায় ও প্রিয় রাসুল সা. এর রওজা মুবারকে সালাম দেয়ার অনুভূতি প্রতিটি মুসলমানের জন্যই পৃথিবীর সকল মূল্যবান সম্পদের চেয়ে অনেক বেশি দামী। আর সেই মক্কায় কিংবা মদীনায়, যে পথগুলোতে প্রিয় রাসুল সা. হেটেছেন, তাঁর জীবন অতিবাহিত করেছেন, যেই নগরীগুলোতে পবিত্র কুরআন শরিফ নাযিল হয়েছে সেই নগরীতে গিয়ে উচ্চশিক্ষা ও অবস্থান করা কতই না সৌভাগ্যের। এমনই একটি সূবর্ণ সুযোগ নিয়ে আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করব।
১৯৬১ সালে সৌদি সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মদীনা। যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়েছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ঠ ও জনপ্রিয় আলেম মরহুম ড আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, শেইখ আহমাদুল্লাহ’সহ আরো হাজারো আলেম। দেশের প্রতিটি স্তরে তারা তাদের যোগ্যতার বহিঃপ্রকাশ প্রতিনিয়তই রেখে যাচ্ছেন। বাংলাদেশি ছাত্রদের জন্য সৌদি আরবের মদীনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার এক স্বর্গভূমি। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছরই হাজারো শিক্ষার্থী মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য তাদের প্রচেষ্টা চালিয়া যাচ্ছে। প্রতিবছর অনেক ছাত্র ফুল ফ্রি স্কলারশীপ নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহন করছে।
সৌদি আরবের শিক্ষানীতির পরিবর্তন করার ফলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সৌদি আরবের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিনিয়তই ছাত্র নিচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ থেকেও অতীতের চেয়ে অধিক শিক্ষার্থী এখন সৌদি আরবে স্কলারশিপ নিয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা বিদ্যমান যে, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু ইসলামী বিষয়গুলাই পড়ানো হয়, কিন্তু না, সেখানে বিভিন্ন সাবজেক্ট পড়ানো হয়। যা ছাত্রদের শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে কাংক্ষিত সাফল্য এনে দিচ্ছে। মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ফ্যাকাল্টি রয়েছে ৪ টি। সেগুলো হলো;
১. ফ্যাকাল্টি অব ইঞ্জিনিয়ারিং : এই ফ্যাকাল্টিতে মোট ৩ টি সাবজেক্ট রয়েছে। প্রতিটি সাবজেক্টই ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট। সাবজেক্ট গুলো হলো- ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকালিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং। এই ফ্যাকাল্টির প্রতিতি কোর্সই ৫ বছর মেয়াদী কোর্স।
২. কম্পিউটার ফ্যাকাল্টি : এই ফ্যাকাল্টিতে মোট ৩ টি সাবজেক্ট রয়েছে। প্রতিটি সাবজেক্টই কম্পিউটার ও তথ্য সংক্রান্ত। সানবজেক্ট গুলো হলো- কম্পিউটার সাইন্স, ইনফরমেশন সাইন্স, ইনফরমেশন টেকনোলজি। প্রতিটি কোর্সের মেয়াদ ৫ বছর করে।
৩. ফ্যাকাল্টি অব সাইন্স : এই ফ্যাকাল্টির আন্ডারে মোট ৩টি পিওর সাইন্স রিলেটেড সাবজেক্ট আছে। সেগুলো হলো- পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত। এই কোর্স গুলো ৪ বছর মেয়াদী কোর্স।
৪. শরীয়াহ ফ্যাকাল্টি : এই ফ্যাকাল্টিতে ইসলামী শরিয়াহ সংক্রান্ত সাবজেক্ট গুলো পরানো হয়। এখানে মোট ৬ টি সাবজেক্ট রয়েছে। সেগুলো হল- শারিয়াহ (ইসলামিক ল), ধর্মতত্ব, ইসলামিক স্টাডিজ ইন কুরআন, ইসলামিক স্টাডিজ ইন হাদিস, এরাবিক ল্যাংগুয়েজ, সিস্টেমস ইন ল। এখানের প্রতিটা সাব্জেকটই ৪ বছর মেয়াদী কোর্স।
কেন পড়তে আসবেন এখানে?
- বিশ্বের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যায়ন করা হয়। এখানে অনার্স/মাস্টার্স করে ব্রিটেন/ইউরোপ/আমেরিকা/অষ্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশে মাস্টার্স/পিএইচডি করতে পারবেন।
- আল্লাহর রসূল সা. মদীনাকে ঈলম বা জ্ঞানের শহর বলেছেন।
- পড়াশোনার যাবতীয় মৌলিক প্রয়োজনগুলো বিশ্বিবদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পূরণ করে তাই নিরবচ্ছিন্ন জ্ঞান অর্জনে এখানে আসবেন।
- বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ শিক্ষক পাবেন।
- বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশের ছাত্ররা এখানে পড়াশোনা করে অর্থাৎ আপনি এখানে সকল দেশের সংস্কৃতির সাথে মিশতে পারবেন অর্থাৎ বিশ্ব নাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবেন।
- মুসলিম হিসেবে ইবাদাতের শহর ও উমরাহ, হজ্জ্ব করার সেই সুবর্ণ সুযোগতো রয়েছেই।
- হোস্টেল ফি মওকুফ। (সম্পূর্ণ ফ্রি)
- টিউশন ফি সম্পূর্ণ ফ্রি।
- মাসিক স্টাইপেন্ড ১৮০০০+ টাকা।
- প্রতি বছর আসা ও যাওয়ার বিমান টিকেট সম্পুর্ণ ফ্রি। বছরে ১ বার আসা যাওয়া করতে পারবেন।
- চিকিৎসা সেবা সম্পূর্ণ ফ্রি।
- মেডিকেল সেবা সম্পূর্ণ ফ্রি।
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- পাসপোর্ট
- ছবি, চশমা ও টুপি ছাড়া ছবি লাগবে।
- আলিম/এইচএসসি/সানাবিয়া সার্টিফিকেট ও মার্কসিট (আরবী অনুবাদ’সহ)
- আলিম/এইচএসসি/সানাবিয়ার প্রশংসা পত্র (আরবী অনুবাদ’সহ)
- জন্ম সনদ (আরবী অনুবাদ’সহ)
- NID কিংবা নাগরিক সনদ পত্র (আরবী অনুবাদ’সহ)
- মেডিকেল সার্টিফিকেট (আরবী অনুবাদ’সহ; ৬ মাসের মধ্যে মেয়াদ থাকতে হবে)
- ২ জন প্রসিদ্ধ আলেমের তাযকিয়া
- অতিরিক্ত হিসেবে হিফয, এরাবিক ল্যাংগুয়েজ’সহ, এ জাতীয় সার্টিফিকেট দেওয়া যাবে। (আরবী অনুবাদ)
আবেদন করার জন্য অবশ্যই অভিজ্ঞদের মাধ্যমেই করা উচিৎ। কারণ, অভিজ্ঞরা ছাত্রদের সঠিক পন্থায় আবেদন করে তাদেরকে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এর পথকে সুগম করে দিতে পারবেন। সাধারণত শিক্ষার্থীরা অভিজ্ঞদের সহযোগীতা ছাড়া নিজেরা আবেদন করতে গিয়ে ভুল করে, ফলে তারা নিজেরাই নিজেদের উজ্জ্বল ক্যারিয়ারকে হুমকির সম্মুখীন করে। তাই আমার পরামর্শ থাকবে, অবশ্যই অভিজ্ঞদের দ্বারাই আবেদন করার চেষ্টা করা উচিৎ।
যেকোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে :
https://www.aussieconsultancy.com.au/
Email: ceo@aussieconsultancy.com.au
Mobile: +61 430 594 661; +88 01731 971 458 ( WhatsApp)
লেখক : প্রকৌশলী মুহাম্মদ আলতাফ হোসাইন
প্রধান নির্বাহী, অজি ইমি এন্ড এডুকেশান কনসালটেন্সী, অস্ট্রেলিয়া।
Email: ceo@ausieconsultancy.com.au ; Web: aussieconsultancy.com.au