আমরণ অনশনে শাবি’র শিক্ষার্থীরা : উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি
সময় সিলেট ডেস্ক
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। তাঁদের পাশে অবস্থান নিয়ে আরও প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী একই দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। গতকাল রাত সাড়ে ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁদের অনশন ও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল।
এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যের প্রতিবাদে এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
পদত্যাগের দাবির বিষয়ে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন- সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে, তা-ই মেনে নেবেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি এ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এদিকে উপাচার্যের পক্ষে মাঠে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের নিয়ে ‘অশালীন, কুরুচিপূর্ণ ও কটূক্তি’র অভিযোগ এনে সমাবেশ করেছেন তাঁরা। গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ কর্মসূচির শুরুতে ৮ থেকে ১০ জন শিক্ষক ছিলেন। পরে আরও অন্তত ৪০ জন শিক্ষক সেখানে যোগ দেন। তাঁরা সবাই এর আগে উপাচার্যের বাসভবনে ছিলেন। কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই উপাচার্যপন্থী হিসেবে পরিচিত বলে জানা গেছে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিষয়ে কেন নিশ্চুপ ছিলেন, সে প্রশ্নের জবাবে এই শিক্ষকেরা বলেছেন- ওই রাতে কী ঘটেছিল, তা তাঁরা জানেন না।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার রাতে উপাচার্যকে গতকাল দুপুর ১২টার মধ্যে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলেন। পদত্যাগ না করলে আমরণ অনশনে বসার ঘোষণা দেন তাঁরা। উপাচার্য পদত্যাগ না করায় বেলা তিনটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ১৫ জন ছাত্র ও ৯ জন ছাত্রী এতে অংশ নেন। অপর শিক্ষার্থীরা তাঁদের পাশে বসে বিক্ষোভ করেন।
এর আগে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে সেখানে একটা কুশপুত্তলিকা রেখে দেন। বাঁশ ও পাটের বস্তা দিয়ে বানানো কুশপুত্তলিকার মাথার অংশে উপাচার্যের ছবি দেখা যায়। আর কুশপুত্তলিকার এক হাতে প্রতীকী টাকার ব্যাগ এবং অন্য হাতে ছিল প্রতীকী পিস্তল।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত গত বৃহস্পতিবার। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগ’সহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন কয়েক শ ছাত্রী। শনিবার সন্ধ্যার দিকে ছাত্রলীগ ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালায়। পরদিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও তাঁদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। ওই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। শাহজালালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, খুলনা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়’সহ বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।