ঢাবির হলে নিপীড়নকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের ছাত্রত্ব বাতিলের দাবি
সময় সিলেট ডেস্ক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থীকে হলের অতিথিকক্ষে ডেকে নিয়ে মানসিক নিপীড়নের অভিযোগে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর ছাত্রত্ব বাতিলের দাবি জানিয়েছেন ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা।
অভিযোগকারী শিক্ষার্থী হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) ছাত্র আকতারুল ইসলাম। তিনি বলেন- অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও গতকাল বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে জোর করে তাঁকে হলের অতিথিকক্ষে যেতে বলেন ছাত্রলীগের ছয়জন কর্মী। তাঁরা তাঁকে বাতির দিকে তাকিয়ে থাকতে বলেন। এতে তিনি জ্ঞান হারান। জ্ঞান হারানোর পর তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে মানববন্ধন করেন তাঁর সহপাঠীরা।
মানববন্ধনে আইন বিভাগের ছাত্র সাখাওয়াত জাকারিয়া বলেন- ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলের অতিথিকক্ষে ম্যানার শেখানোর নামে নির্যাতন করা হয়। গেস্টরুমের নামে তাঁদের ওপর জুলুম করা হয়। আমরা সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই সংস্কৃতির চিরতরে অবসান চাই৷ নবীন শিক্ষার্থীদের ওপর গেস্টরুমের নামে আর কোনো নির্যাতন হলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব।’
ইসলামিক স্টাডিজের ছাত্র হাসান ইমাম বলেন- ‘গেস্টরুমে ম্যানার শেখানোর নামে অকথ্য নির্যাতন ও গালিগালাজের শিকার বন্ধুর জন্য আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের যেভাবে নির্যাতন করা হয়, তাতে ঢাকায় থাকার অন্য জায়গা থাকলে সুস্থ-মস্তিষ্কের কেউ হলে থাকতেন না। থাকার জায়গা না থাকায় শিক্ষার্থীরা নির্যাতন সয়ে দিনের পর দিন হলে থাকেন। এই অপসংস্কৃতি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। বিজয় একাত্তর হলে নির্যাতনকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের শনাক্ত করে তাঁদের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র রিফাত রশীদ বলেন- ‘আমরা ভাবতাম যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শিক্ষামুখর পরিবেশে আনন্দে লেখাপড়া করব। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর আমাদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে৷ আমরা তো মেধা দিয়ে সংগ্রাম করেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি। তাহলে কেন আমাদের নির্যাতন সহ্য করতে হবে? গেস্টরুমের নামে নির্যাতন বন্ধ হোক।’
দর্শন বিভাগের ছাত্রী নাফিসা ইসলামও বিজয় একাত্তর হলে নির্যাতনকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন- বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে থাকা এই প্রথা আইন করে বন্ধ করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা মানসিক শান্তি নিয়ে পড়াশোনা করতে পারেন।
প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের এই মানববন্ধনের পর একই দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আরও একটি মানববন্ধন হয়। সেখানে বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এই মানববন্ধনে আইন বিভাগের ছাত্র কাজী রাকিব হোসাইন বলেন- বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রশাসন নবীন শিক্ষার্থীদের সিট দেয় না বলে তাঁদের ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত গণরুমে থাকতে হয়৷ হলে থেকে তাঁরা অপুষ্টিতে ভোগেন, নির্যাতিত হন। প্রতিনিয়ত হলগুলোতে এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে। গণরুম-গেস্টরুম শাসকদের জন্য জরুরি। এসবের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।