৫০ বছরের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে এর চেয়ে লজ্জার কিছু নেই: আলমগীর
বিনোদন ডেস্ক
চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ১৭ সংগঠন এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমীনের পদত্যাগের দাবিতে গত রবিবার (৩০ জানুয়ারি) থেকে আন্দোলনে নামে। এমনকি কুশপুত্তলিকাও পোড়ায়। এই আন্দোলনের পরপরই আন্দোলকারী সংগঠন থেকে দাবি তোলা হয়, বরেণ্য অভিনয়শিল্পী আলমগীরকে এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হোক। তিনি দায়িত্ব নিলেই এফডিসির এই অস্থিরতা কেটে যাবে। কিন্তু যাঁকে নিয়ে সংগঠনগুলোর এই চিন্তা, তিনি সরাসরি জানিয়ে দিলেন, এফডিসির এমডি পদে তিনি আসতে চান না। কারণ, তাঁর সেই যোগ্যতা নেই।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) বাগানে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট সব সংগঠনের মুখপাত্র আলমগীর বলেন- ‘যদি চাইতাম, পাঁচ-সাত বছর আগেই এমডি হতে পারতাম। কিন্তু আমি এই পদে নিজেকে দেখতে চাই না।’
কথায় কথায় মজাচ্ছলে আলমগীর বললেন- ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের ক্ষেত্রে নিয়মকানুন আছে। কিন্তু আমি ঘুম থেকে উঠিই সকাল ১০টার পর। তাহলে এই পদ আমাকে দিয়ে কীভাবে সম্ভব?’
চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ১৭ সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়- বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের স্বেচ্ছাচারিতায় চলচ্চিত্রের ১৭ সংগঠনের সদস্যরা শিল্পী সমিতির নির্বাচনের দিন এফডিসিতে ঢুকতে পারেননি। তাই তারা এই এমডির অপসারণ চায়। একই সঙ্গে এফডিসির নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে অভিনেতা আলমগীরকে দাবি করে তারা।
চলচ্চিত্রকে মনেপ্রাণে ভালোবাসেন, এমন ব্যক্তি হিসেবে আলমগীরকে এমডি পদে দেখতে চায় সবাই। পরিচালক সমিতির বর্তমান সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান বলেন- ‘আলমগীর ভাইকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে চাওয়াটা আমাদের এখন আর মৌখিক দাবি নয়। আমরা ১৮ সংগঠনের পক্ষ থেকে শিগগির তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব। লিখিত আকারেও দাবি জানাব। বর্তমান চলচ্চিত্রে আলমগীর ভাইয়ের মতো পরিষ্কার মনমানসিকতার মানুষ কম আছেন। সবার বিপদ-আপদে তিনি হাজির হন। শুধু তা–ই নয়, সাংগঠনিকভাবে তাঁর অভিজ্ঞতা দারুণ। তিনি এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলে আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া হবে। তাঁর মাধ্যমেই শুধু এফডিসির বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন আসতে পারে।’
এ সময় পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, শাহ আলম কিরণ, বদিউল আলম খোকন, পরিচালক সমিতির বর্তমান মহাসচিব শাহীন সুমনও উপস্থিত ছিলেন। তাঁদেরও দাবি কোনো আমলা নন, এফডিসির এমডি হওয়া উচিত চলচ্চিত্রেরই কারও।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেকে নায়ক আলমগীরকে এফডিসির এমডি পদে দেখতে চাওয়ার দাবি তোলেন এবং এই পদে সিনেমার মানুষ হিসেবে আলমগীরকে দেখতে চান।
সাংবাদিকদের করা এমন প্রশ্নের জবাবে আলমগীর বলেন- ‘এর আগেও রাজীব সাহেব ও পীযূষ বন্দোপাধ্যায় ছিলেন, চলচ্চিত্রের কী এমন উন্নয়ন হয়েছে। আমি এলেও তিন বছর পর আপনারাই আমার সমালোচনা করবেন।’
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের দিন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ১৭ সংগঠনের সদস্যদের এফডিসিতে ঢুকতে না পারার বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন আলমগীর। সংবাদ সম্মেলনে নায়ক আলমগীর বলেন- ‘নির্বাচনের দিন পরিচালক, প্রযোজক ও চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত মানুষেরা তাঁদের এফডিসিতে ঢুকতে পারেননি। আমার ৫০ বছরের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে এর চেয়ে লজ্জার কিছু নেই। এই বাড়ি, এই জায়গা সবই আমাদের। অথচ আমরাই এখানে প্রবেশ করতে পারিনি। চলচ্চিত্রের একজন মানুষ হিসেবে লজ্জা বোধ করি।’
নির্বাচনের পরদিন ১৭ সংগঠনের সদস্যদের পক্ষে পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান বলেছিলেন- এফডিসির এমডি অপসারণ করা না পর্যন্ত কর্মবিরতিতে যাবেন। এফডিসিতে কারও শুটিং করতে দেওয়া হবে না।
এফডিসির সব সংগঠনের মুখপাত্র হিসেবে আলমগীর বলেন- ‘এই সংবাদ সম্মেলনের আগে সব সংগঠনের সদস্যরা মিলে একটি মিটিং করেছি। আপাতত কাজ চলবে। কারণ, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করার ব্যাপারে আলাপ হয়েছে। তিনি আমাদের দাবির ব্যাপারে মৌখিকভাবে আশ্বস্ত করেছেন। আগামীকাল তাঁর সঙ্গে দেখা হতে পারে। তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মন্ত্রী মহোদয়ের সিদ্ধান্তের ওপর আমাদের কর্মসূচি নির্ভর করছে।’