বহুতল ভবনে নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে নামবে সিসিক
স্টাফ রিপোর্টার
চলতি বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারী সিলেটের ১১ তলা একটি ভবনে আগুন লাগে। জিন্দাবাজারের সিটি সেন্টার নামের ওই ভবনে কোনো লোকবল এবং অগ্নি নির্বাপনকর্মী না থাকায় সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণে ১০ ঘন্টা সময় লাগে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটের। অগ্নি নির্বাপনের জন্য লাগানো পানির পাইপগুলো কাজ করছিলো না। আগুন নেভানোর জন্য লাগানো স্প্রেগুলো অকার্যকর ছিলো। শুধু এ মার্কেট নয়, সিলেট নগরীতে অনুমোদপ্রাপ্ত ৫ শতাধিক বহুতল ভবনেই নেই নিজস্ব অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা। প্রতিটি মার্কেটে নিয়ম মানার জন্য লাল রঙ্গের স্প্রে সিস্টেমের সিলিন্ডার দেয়ালে ঝুলানো থাকলেও এগুলো কোনা কাজ করেনা। নামমাত্র নিরাপত্তাকর্মী দিয়ে ১০/১৫ তলা ভবন পর্যন্ত পরিচালনা করা হচ্ছে। আগমন বহির্গমনের দুটি গেইট থাকলেও একটি বন্ধ রেখে চলে পার্কিং ব্যবসা। ফলে প্রতিটি ভবনে বসবাসকারীরা চব্বিশ ঘন্টাই থাকছেন চরম ঝুঁকিতে। আর সেসব ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাঠে নামছে সিসিক।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা গেছে— সিলেট নগরীতে ৪৩ হাজার ভবনের অনুমোদন দিয়েছেন তারা। এর মধ্যে ১০ তলার অধিক ভবনের সংখ্যা আছে প্রায় দেড়শ’। আর ১০ তলার নিচে ৫ তলা পর্যন্ত ভবনের সংখ্যা আছে ৪ থেকে ৫শ। এসব ভবনের নকশা অনুমোদনের সময় ইমারত নির্মাণ আইন ২০০৮ মোতাবেক সকল বিধি মেনেই আবেদন করা হয়। ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের অনুমতির পর সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল শাখা পরিদর্শন করে অনুমোদন দিয়ে থাকে। কিন্তু ভবন নির্মাণের অনুমতির পর আর সেদিকে কোনো কর্তৃপক্ষেরই খেয়াল থাকে না। খোদ সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী স্বীকার করলেন ভূমিকম্প হলে বা আগুন লাগলে তাদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। কিন্তু এ ভবনগুলো দুর্যোগ মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক কোনো ভূমিকা রাখছে কিনা তা দেখা হয়না। তারা বিভিন্ন সময় একাধিক বিষয় নিয়েই ব্যস্ত থাকেন।
নগরীর ভবনগুলোর বাসিন্দাদের নিরাপত্তা, অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা নিশ্চিতে ওয়ান ইলেভেনের সময় তোড়জোড় শুরু হলেও গত ১৫ বছরে চুল পরিমাণও অগ্রগতি হয়নি। কোনই তদারকি নেই ভবনগুলোতে। যে যার মতো করে পরিচালনা করছেন বহুতল ভবন। বিশেষ করে সিলেট নগরের জিন্দাবাজার বন্দরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠা বিপনী বিতান এবং আবাসিক ভবনগুলো সব সময় কোনো না কোনো ঝুঁকির মধ্যে থাকছে। আর নগর কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন আর ফায়ার সার্ভিসের নির্লিপ্ততায় দিনের পর দিন চরম অনিরাপদ হয়ে উঠছে অগ্নিকান্ড ও ভূমিকম্পের ডেঞ্জার জোন খ্যাত সিলেট নগরীর বহুতল ভবনগুলো।
এসব ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স এর সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার আজিজুর রহমান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন— ২০০৩ সালের বিএনডিসি আইনের ৭ ধারামতে বহুতল ভবনগুলোর নিরাপত্তা মালিকরাই নিশ্চিত করবেন। আমাদের পরিচালকের কার্যালয় শুধু অনুমতি দিয়ে থাকে। আর সকল কাজ নগর কর্তৃপক্ষের।
এ প্রসঙ্গে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন— আসলে আমাদের এতো কাজ। সবসময় সবদিকে খেয়াল রাখা যায়না। ওয়ান ইলেভেনের সময় বহুতল ভবনগুলোর বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষে অভিযান হয়েছিলো। সে সময় আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যানেজমেন্টসহ কয়েকটি ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিলো। কয়েকটি ভবনের পার্কিং পর্যন্ত খালি করার নির্দেশ ছিলো।
সে সব পদক্ষেপ বন্ধ হলো কেনো- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন— আসলে বন্ধের কোনো কারণ নেই। আমরাই পারছিনা সবদিকে খেয়াল রাখতে। যখন ভূমিকম্প হয়, কিংবা বড় ধরণের কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তখন আমরা কাজ করি। সব সময় করতে পারি না। তবে এসব ব্যাপারে তদারকির সম্পূর্ণ দায়িত্ব সিসিকের উল্লেখ করে তিনি বলেন— আসলে বিষয়টি নিয়ে আমরা এভাবে চিন্তা করিনি। তবে নাগরিকদের নিরাপত্তায় সিসিক ভবনগুলোতে তদারকি বাড়াবে। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে।