শাল্লায় তাণ্ডব: স্বাধীন মেম্বারসহ ৭২ আসামি ফের কারাগারে
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা
সুনামগঞ্জের শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় প্রধান আসামি শহীদুল ইসলাম স্বাধীনসহ ৭২ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বিচারিক হাকিম আদালতে আসামিরা জামিন নিতে গেলে মঙ্গলবার দুপুরে বিচারক আব্দুর রহিম তাদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী খায়রুল কবির রুমেন।
একটি ফেসবুক পোস্টের জেরে গত বছরের ১৭ মার্চ নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা চালানো হয়। লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে কয়েক হাজার লোক হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে হিন্দুদের ৯০টি ঘর। লুটপাট হয় তাদের সম্পদ।
গত বছরের ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম। এতে বক্তব্য রাখেন— সংগঠনটির সাবেক নেতা মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী ও মামুনুল হক। সমাবেশে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ তুলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন— দিরাইয়ের পাশের উপজেলা শাল্লার নোয়াগাঁও গ্রামের যুবক ঝুমন দাস।
১৬ মার্চ ঝুমন ওই স্ট্যাটাস দেয়ার পর থেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে স্থানীয় হেফাজতে ইসলামের অনুসারীরা। মামুনুলের সমালোচনাকে তারা ইসলামের সমালোচনা বলে এলাকায় প্রচায় চালায়। এতে এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ওই রাতেই পুলিশ ঝুমন দাসকে আটক করে। পরদিন সকালে হাজারও মানুষ মিছিল নিয়ে হামলা চালায় নোয়াগাঁওয়ে। ঝুমনের এক স্ট্যাটাসের জন্য ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় ৯০টি ঘর।
নোয়াগাঁওয়ের লোকজন জানান— দিরাই উপজেলার নাচনি, চণ্ডীপুর, সরমঙ্গল, সন্তোষপুর ও শাল্লার কাশিপুর, ধনপুরসহ কয়েকটি গ্রামে মসজিদ থেকে ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়ানো হয় সেদিন। এরপর এসব গ্রামের মানুষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নোয়াগাঁওয়ে নারকীয় হামলা চালায়।
তাণ্ডবের সময় ফেসবুকে লাইভ করে হামলাকারীরা। এতে দেখা গেছে— হামলায় নেতৃত্বদানকারীদের অনেকের মাথায় ছিল ‘হেফাজতে ইসলাম’ লেখা বেল্ট।
নোয়াগাঁওয়ে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত হন শহিদুল ইসলাম স্বাধীন নামে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য। তিনি যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার নেতৃত্বেই হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। স্বাধীন মেম্বারসহ প্রায় দেড় হাজার জনকে আসামি করে শাল্লা থানায় তিনটি মামলা হয়। বিপুলসংখ্যক লোককে আসামি করা হলেও পুলিশ এক বছরে গ্রেফতার করেছে ৭৫ জনকে। গ্রেফতারের কিছুদিন পরই সবাই জামিন পেয়ে যান।
চলতি বছর ইউপি নির্বাচনে ফের মেম্বার নির্বাচিত হন স্বাধীন।
নোয়াগাঁওয়ের বাসিন্দা তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ দাস ও পুলিশের করা দুটি মামলায় সম্প্রতি অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। দুই মামলার অভিযোগপত্রে ১৮৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আর ঝুমন দাসের মায়ের করা মামলাটি তদন্তের জন্য গোয়েন্দা বিভাগকে (ডিবি) দেয়া হয়েছে।
পরে ঝুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেয় পুলিশ। তার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন হয়। প্রায় সাত মাস জেল খাটার পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত বছরের সেপ্টেম্বরে জামিনে মুক্তি পান ঝুমন।