স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন দিতে টাকা নেওয়ার অভিযোগ
সময় সংগ্রহ
হবিগঞ্জের মাধবপুরে কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন দিতে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এরপর শুরু হয়েছে এ নিয়ে আলোচনা। উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ।
জিল্লুরের বিরুদ্ধে বিদেশগামীদের করোনার ভুয়া সনদ দেওয়ারও অভিযোগ ওঠেছে। ভুয়া সনদ নিয়ে প্রবাসগামী যাত্রীরা বিমানবন্দরে গিয়ে আটক হয়ে বাড়িতে ফিরে আসছেন। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এ বিষয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালকের (অতিরিক্ত সচিব) নিকট লিখিত অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়— মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডর জিল্লুর রহমান দীর্ঘদিন যাবত কমিউনিটি ক্লিনিক নিজের মতো করে চালাচ্ছেন। তার কাছ থেকে ঔষধ আনতে গেলে ৫০ থেকে ১০০ টাকা নেন। টাকা না দিলে ঔষধ দেন না। তার বাড়িতেই দেওয়া হয় কোভিডের ভ্যাকসিন। এমনকি বিদেশগামীদের ভুয়া কোভিড ভ্যাকসিন দিয়ে তাদের ভুয়া সনদ দেন। সনদ প্রতি হাতিয়ে নিচ্ছেন ৩ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা। তার দেওয়া ভুয়া সনদ নিয়ে বিদেশগমনকারীরা বিমানবন্দরে গিয়ে আটক হচ্ছেন।
এরকম ঘটনায় বিদেশগমনকারীরা জিল্লুর রহমানের বাড়িতে এসে প্রতিবাদ করেন। জিল্লুরের ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা।
গত রবিবার স্বাস্থ্য পরিদর্শক প্রিয় লাল ঘোষ সরেজমিন ক্লিনিক পরিদর্শন করতে গেলে জিল্লুরের অফিস ফাঁকির বিষয়টি ধরা পড়ে। ওইদিন জিল্লুর কমিউনিটি ক্লিনিকে যাননি। অফিস থেকে কোনো ছুটিও নেননি। জিল্লুরের স্থলে তার স্ত্রী দায়িত্ব পালন করছেন। তখন স্বাস্থ্য পরিদর্শক জিল্লুরের স্ত্রীকে জিল্লুর কোথায় আছে জানতে চাইলে জিল্লুরের স্ত্রী জানায় তার স্বামী অসুস্থ। তাই তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। পরে স্বাস্থ্য পরিদর্শক প্রিয় লাল ঘোষ ক্লিনিকের পরিদর্শন বহিতে মন্তব্য কলামে জিল্লুরের অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার বিষয়টি নোট করেন।
জিল্লুরের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরিছপুর গ্রামের শফিক মিয়া কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (অতিরিক্ত সচিব) নিকট একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এছাড়া জেলা সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমকর্তার নিকট অনুলিপি দিয়েছেন।
আরিছপুর গ্রামের বাসিন্দা কমিউনিটি ক্লিনিকের জমিদাতার ছেলে মাসুম আহমেদ বলেন— ‘আমার মা সম্প্রতি কমিউনিটি ক্লিনিকে ঔষধ আনতে যান। সেখানে জিল্লুর তার মাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়।’
আরিছপুর গ্রামের গৃহবধু ফাহমিদা আক্তার, রাশিদা বেগম, আমিনা খাতুন জানান— কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে যে প্রাথমিক সেবা টা পাওয়ার কথা সেটাও টাকা ছাড়া পাওয়া যায় না। জিল্লুরের বাড়ির পাশে কমিউনিটি ক্লিনিক হওয়ায় তিনি কমিউনিটি ক্লিনিকে না গিয়ে মোশারফ কর্ণার নামে বাড়িতে একটি ফার্মেসী চালান। সেখানে প্রায় সময় জিল্লুরের জায়গায় তার স্ত্রী কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্ব পালন করেন।
কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী মাহমুদ আক্তার জানান— তিনি ৩ দিন ক্লিনিকে আর ৩ দিন মাঠে দায়িত্ব পালন করেন। জিল্লুর অনেকের নিকট থেকে ঔষধের নামে টাকা নেন। তাই মানুষ না বুঝে টাকা নিয়ে এসেছে।
এ ব্যাপারে জিল্লুরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান— ভাইরাল হওয়া ভিডিও এডিট করা। আর অভিযোগগুলো মিথ্যা।
মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইশতিয়াক আল মামুন জানান— জিল্লুরের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।