আরএসএফের প্রতিবেদন বিদ্বেষ প্রসূত: তথ্যমন্ত্রী
সময় সিলেট ডেস্ক
বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন— এই প্রতিবেদন বিদ্বেষপ্রসূত, আপত্তিকর এবং অগ্রহণযোগ্য।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মন্ত্রী তাঁর চট্টগ্রামের দেওয়ানজী পুকুরপাড়ের বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে এ বিষয়ে তাঁদের প্রশ্নের জবাবে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান।
গত মঙ্গলবার বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) ২০২২ সালের সূচক প্রকাশ করে। আরএসএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী— বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশ গত বছরের তুলনায় ১০ ধাপ পিছিয়েছে। সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬২তম (স্কোর ৩৬ দশমিক ৬৩)। সূচকে সবার শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে।
গতকালতথ্যমন্ত্রী বলেন— ‘প্যারিসভিত্তিক সংস্থা আরএসএফ সব সময় বাংলাদেশের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত। তারা গত বছর এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে প্রচণ্ড আপত্তিকর মন্তব্য ছিল। তারা বাংলাদেশের গণমাধ্যম নিয়েও অসত্য ভুল এবং মনগড়া রিপোর্ট করে। সেটার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বৃহত্তর সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো যেমন প্রতিবাদ জানিয়েছিল, একইভাবে প্যারিসপ্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশি ফ্রান্সের আইনজীবীর মাধ্যমে আরএসএফের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ দিয়েছিল।’
হাছান মাহমুদ বলেন— ‘সেই আইনি নোটিশে বলা ছিল, তারা কোনো দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের ব্যাপারে এ রকম মন্তব্য করতে পারে না, ফ্রান্সের আইনেই সেটি বলা আছে, অর্থাৎ তারা ফ্রান্সের আইন লঙ্ঘন করে সেটা করেছে। সুতরাং তারা এখন যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, এটিও কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, এটি আপত্তিকর এবং বিদ্বেষপ্রসূত।’
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন— যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ক্রমাগতভাবে বিদেশে অপপ্রচার চালাচ্ছে, সে সব সূত্র থেকে আরএসএফ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে এবং নিজেরাও বাংলাদেশের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে যে রিপোর্ট দেয়, সেটির কোনো মূল্য নেই। গত বছর বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নসহ (বিএফইউজে) সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন তাদের সেই প্রতিবেদন ও মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানিয়েছিল, বিবৃতি দিয়েছিল।
হাছান মাহমুদ বলেন— সেই একই সংগঠন যখন আবারও বাংলাদেশের গণমাধ্যম নিয়ে কথা বলে, তখন স্বাভাবিকভাবেই ধরে নিতে হবে তারা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে।
ডিজিটাল বা সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়েও আরএসএফ কথা বলেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন— ডিজিটাল বিষয়টি যখন ছিল না, তখন ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টিও ছিল না। যখন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ডিজিটাল বিষয়টি এসেছে, তখন গণমানুষকে ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশ আইন করেছে।
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এই আইন হয়েছে এবং হচ্ছে। সিঙ্গাপুর, ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে, বাংলাদেশেও হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন— ‘এই আইন সব মানুষকে ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। এই আইনের সুযোগ গ্রহণ করে অনেক সাংবাদিকও তাঁদের মানহানিকর বিষয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। সাংবাদিক হোক, সাধারণ মানুষ হোক, কারও বিরুদ্ধে এই আইনের অপব্যবহার হওয়া উচিত নয়, সে নিয়ে আমরা সতর্ক আছি।’ তিনি বলেন— ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়ে বাংলাদেশে যেসব ধারা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়, কেউ কেউ সমালোচনাও করেন, অথচ ভারত-পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশে যে আইনগুলো হয়েছে, সেখানেও অনুরূপ ধারাগুলো সন্নিবেশিত আছে।
হাছান মাহমুদ বলেন— ‘এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন ফ্রেমওয়ার্ক ল করছে, যেটার অধীনে বিভিন্ন দেশে পদক্ষেপ নেওয়া হবে, আইন করা হবে। ফ্রান্সেও একই ধরনের আইন আছে। সুতরাং আরএসএফ আগে থেকেই যেহেতু বাংলাদেশের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত, সে জন্যই তারা বাংলাদেশকে কয়েক ধাপ নামিয়ে দিয়েছে। আমরা এটি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করছি।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঈদের দিন বলেন— ‘দেশে গণতন্ত্র নেই, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন কারণে মানুষের মন ভালো নেই, তাই দেশের মানুষ ভালোভাবে ঈদ করতে পারেনি।’ এ বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন— করোনা মহামারির পর এবার যেভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলাদেশের মানুষ ঈদ করেছে, সেটি অভাবনীয়। শুধু তা-ই নয়, এ বছর দেশের মানুষ যেভাবে কেনাকাটা করেছে, ব্যবসায়ীরা প্রচণ্ড খুশি এবং দেশের অর্থনীতি চাঙা হয়েছে। এবার দেশে ঈদযাত্রা অনেকটা ভোগান্তিহীন ছিল। মানুষের মধ্যে এখনো খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে।