মাধবপুরে বোরো ধানের দাম নিয়ে কৃষকরা হতাশ : সংগ্রহ মাত্র ৩ টন
মাধবপুর সংবাদদাতা
হবিগঞ্জের মাধবপুরে এবার চলতি বোরো মৌসুমে বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বিনামূল্যে সার, বীজ এবং আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার ধানের ফলন হয়েছে বেশি। কিন্তু ফলন বেশি হলেও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় এখন কৃষকরা কম দামে ধান বিক্রি করছে। প্রতি মন ধান এখন ৭শ থেকে ৮শ ৫০ টাকা মন ধরে বিক্রি করছে। শ্রমিকের মজুরী বেশি হওয়ায় এক বিঘা জমির ধান কাটতে খরচ হচ্ছে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা।
সরকার ভর্তুকি মূল্যে ধান কাটা মাড়াই যন্ত্র সরবরাহ করলেও কৃষকরা কোন সুফল পাচ্ছেনা। সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। ধান কাটা মাড়াই যন্ত্র দিয়ে এক বিঘা জমির ধান কাটতে কৃষকদের গুনতে হয় ২ হাজার টাকা। কৃষকরা কালবৈশাখীর ভয়ে বাধ্য হয়েই উচ্চ দামে ধান কাটিয়েছে। কৃষি অফিসের তদারকি না থাকায় ধান মাড়াই যন্ত্র দিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে যেভাবে পারছে সে ভাবে টাকা আদায় করছে। সেচ খরচসহ সব কিছু মিলে কৃষকের ধান উৎপাদন খরচ এবার বেশি পড়েছে।
শাহজাহানপুর ইউনিয়নের কৃষক শেরু মিয়া জানান— তিনি ৪ বিঘা জমিতে ব্রি২৮ জাতের ধান চাষ করেছিলেন। প্রতি বিঘাতে ফলন হয়েছে ১০ থেকে ১২ মন। এখন কিছু ভেজা ধান বিক্রি করেছে ৭শ টাকা মন ধরে। শুকনো ধান বিক্রি হয় ৮শ টাকা মন ধরে। সরকারি গুদামে ধান সরবরাহের কোন সুব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে স্থানীয় ধান ব্যবসায়ীদের কাছে কৃষকদের ধান বিক্রি করতে হয়। একটু বৃষ্টি হলে ধানের দাম আরো কমে যায়। সরকারি ভর্তুকি ধান কাটা মড়াই যন্ত্র দিয়ে ধান কাটা সম্ভব হয়নি। প্রতি বিঘা খরচ চায় ২হাজার টাকা করে। পরে বাধ্য হয়ে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটাতে হয়েছে।
বুল্লা ইউনিয়নের কৃষক আনিছুর রহমান বলেন— শ্রমিক সংকট ও ধান কাটা মাড়াই যন্ত্র না পেয়ে এখন প্রতি বিঘা জমির ধান কাটাতে হচ্ছে ৩ হাজার টাকা ধরে। প্রতি বিঘা জমি ধান চাষাবাদ করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে ধানের দাম কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও উঠবেনা। সরকারিভাবে যে পদ্ধতিতে গুদামে ধান সরবরাহ করা হয় সাধারণ কৃষকরা এ ব্যাপারে অবগত নয়। যে কারনে কৃষকরা সরকারি খাদ্য গুদামে সময় মত ধান দিতে পারে না।
স্থানীয় ধান ব্যবসায়ী আব্দুল আলী বলেন— ধান মাড়াইয়ের পর কাঁচা ধান প্রতি মন ৭শ টাকার কিছু ওপরে এবং শুকনো ধান সর্বোচ্চ ৮শ ৫০টাকা ধরে ক্রয় করা হচ্ছে।
মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসান জানান— এবার মাধবপুরে ১১ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। ফলন হয়েছে ৪৪ হাজার মেট্রিকটন। বিনামূল্যে সার বীজ ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় মাধবপুরে বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। যারা সরকারি ভুর্তকি ধান কাটা মাড়াই যন্ত্র দিয়ে বেশি দাম রাখার চেষ্টা করেছে তাদেরকে আমরা কঠোরভাবে নিযন্ত্রণ করেছি। যাতে কৃষকের কোন সমস্যা না হয়।
মাধবপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান— এ বছর বোরো ধানের প্রতি কেজি ধানের সরকারি দর ২৭ টাকা। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১শ ৪২ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ১০ মে পর্যন্ত ৩ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে।