‘দেশের প্রথম’ আর্টস কলেজ হচ্ছে সিলেটে
স্টাফ রিপোর্টার
সিলেটে হচ্ছে দেশের প্রথম ‘আর্টস কলেজ’। যেখানে থাকবে শিল্পকলার বিভিন্ন মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ। ১১ জুন (শনিবার) ‘সিলেট আর্টস কলেজ’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানটির উদ্বোধন করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. একে আব্দুল মোমেন।
উদ্যোক্তারা জানান— শিল্প সংস্কৃতির সমৃদ্ধ অঞ্চল সিলেটে এতোদিন শিল্পকলার কোন মাধ্যমেই উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ ছিলো না। এই কলেজ প্রতিষ্ঠার ফলে সে অভাব ঘুচবে।
তারা জানান— দেশের বিভিন্ন স্থানে চারুকলা শিক্ষার জন্য আর্ট কলেজ রয়েছে। শিল্পকলার সব মাধ্যমে শিক্ষালাভের জন্য আলাদা কোন প্রতিষ্ঠান নেই। সে ক্ষেত্রে সিলেট আর্টস কলেজ অনন্য।
সিলেট আর্টস কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হ্যাল্ড রশীদ। তিনি বলেন— আমরা দীর্ঘদিন ধরেই সিলেটে চারুকলা শিক্ষার জন্য একটি আর্ট কলেজ প্রতিষ্ঠার চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি। সাবেক অর্থমন্ত্রী সদ্যপ্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিতও আমাদের উদ্যোগের সথে ছিলেন। তার অনুপ্রেরণায়ই ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সিলেট আর্ট কলেজের দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়। মুহিত এই কলেজের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।
হ্যারল্ড জানান— পদাধিকার বলে এই প্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন জেলা প্রশাসক। চলতি বছরে সিলেটের বর্তমান জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নেয়ার পর চারুকলার পাশাপাশি শিল্পকলার অন্যান্য মাধ্যমও পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন। তার প্রস্তাবেই পাঠ্যক্রমে চারুকলার পাশপাশি, সঙ্গীত, নাটক ও নৃত্য বিষয় যুক্ত করা হয়। এবং সিলেট আর্ট কলেজের নাম পরিবর্তন করে ‘সিলেট আর্টস কলেজ’ রাখা হয়।
তবে প্রথম বছরে চারুকলা ও সঙ্গীত বিষয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে নাটক ও নৃত্য বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে বলে জানান কলেজটির অধ্যক্ষ।
এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সদর উপজেলার বটেশ^রে এক একর জমি দান করেছেন— আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তবে নিজস্ব ভ’মিতে অবকাঠামো নির্মাণের পূর্ব পর্যন্ত নগরের কুমপাড়পাড়ার সিলেট আর্ট এন্ড অটিস্টিক স্কুলে অস্থায়্যভাবে পাঠদান কার্যক্রম চলবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
কলেজটির ওয়েব সাইট ঘেঁটে দেখা যায়— এই প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্ঠা হিসেবে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী, আবুল বারক আলভী, নেসার হোসেন, জামাল আহমদ, শিশির ভট্টাচার্য্য, গৌতম চক্রবর্তী, ভাস্কর তরুণ ঘোষ, উচ্চাঙ্গসংগীতশিল্পী শম্পা রেজা, নজরুলসংগীতশিল্পী নাশিদ কামাল, রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদী মহম্মদ, নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদ, স্থপতি সৈয়দা জেরিনা হোসেন, নাট্যশিল্পী নায়লা আজাদ, শিল্পী সায়ান চৌধুরী অর্নব প্রমুখ।
কলেজের উপাধ্যক্ষ ইসমাইল গণি হিমন বলেন— সিলেট আর্টস কলেজের উদ্বোধন উপলক্ষে প্রয়াত দুই চিত্রশিল্পী অরবিন্দ দাশগুপ্ত ও শাহ আলমের সপ্তাহব্যাপী যৌথ চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। যা ১১ জুন শুরু হয়ে ১৭ জুন শেষ হবে। এ ছাড়া কলেজের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা ও শিল্পীদের অংশগ্রহণে ওরিয়েন্টেশন ক্লাস ও কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি জানান— ১২ জুন সঙ্গীত বিষয়ে ওরিয়েন্টশন ক্লাস এবং কর্মশালায় অতিথি হিসেবে থাকবেন শিল্পী হিমাংশু বিশ্বাস, শম্পা রেজা, নাশিদ কামাল, নায়লা আজাদ ও শিবলী মোহাম্মদ।
১৪ জুন চিত্রকলা (ড্রইয়িং, পেইন্টিং ও ভাস্কর্য) বিষয়ে ওরিয়েন্টশন ক্লাস এবং কর্মশালায় অতিথি হিসেবে থাকবেন শিল্পী রফিকুন নবী ও নেসার হোসেন। ১৫ জুন একই বিষয়ে ওরিয়েন্টশন ক্লাস এবং কর্মশালায় উপস্থিত থাকবেন শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য ও তরুণ ঘোষ।
১৭ জুন সঙ্গীত (ইনস্ট্রুমেন্টাল) বিষয়ে ওরিয়েন্টশন ক্লাস এবং কর্মশালায় অতিথি হিসেবে থাকবেন ‘অর্ণব এন্ড ফ্রেন্ডস’ নামে পরিচিত শিল্পী সায়ান চৌধুরী অর্নব, ফাইজান রশিদ আহমদ বুনো, প্রান্থ কানাই ও ইমরান আহমদ।
এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে সিলেট নাট্য পরিষদের স্ধাারণ সম্পাদক রজতকান্তিু গুপ্ত বলেন— আমাদের সবসময়ই আক্ষেপ ছিলো এখানে শিল্প ও সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোন সুযোগ ছিলো না। দীর্ঘদিন পরে হলেও এরকম একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এজন্য আমরা সবাই আনন্দিত।
এই প্রাতষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সিলেটের শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চা আরও বিকশিত হওয়ার আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন— সরকারের সংশ্লিস্ট ব্যক্তিদেরকেও এই প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে।