নবীপ্রেমের মিছিল-সমাবেশে উত্তাল সিলেট: রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানানোর দাবি
স্টাফ রিপোর্টার
ভারতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. ও উম্মুল মু’মিনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাযি. কে নিয়ে কটূক্তিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদের উত্তাল ঢেউ থামছেনা। আবারো মিছিল মিছিলে প্রকম্পিত হলো সিলেট নগরী।
মঙ্গলবার (১৪ জুন) সকাল থেকেই নগরী ও আশপাশ এলাকার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নগরীর ঐতিহাসিক কোর্ট পয়েন্টে এসে জড়ো হয়। দুপুরে তা রূপ নেয় জনস্রোতে। আল্লামা মুহিবুল হক গাছবাড়ীর ডাকে এসব মিছিলের বেশিরভাগই আসে বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসা থেকে। তাদের সাথে যোগ দেন সাধারণ জনতাও। খন্ড খন্ড মিছিলে পরিণত হয়ে যায় মিছিলের নগরীতে।
এরপর কোর্ট পয়েন্টে অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ। ভ্রাম্যমাণ দুটি ট্রাকে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিলেট দরগাহ মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা মুহিবুল হক গাছবাড়ী। এ সময় বিভিন্ন মাদ্রাসার মুহতামিম ও ইসলামী রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশ থেকে কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়। বক্তারা বলেন— ভারতে মহানবী মুহাম্মদ সা. ও আয়েশা সিদ্দিকা রাযি. কে কটূক্তিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অবশ্যই দিতে হবে। একইসাথে এসব দৃষ্টতা প্রদর্শনকারীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানাতে হবে।
মাওলানা মুহিবুল হক গাছবাড়ি বলেন— রাসুলুল্লাহ সা. ইহ-পরকালীন শান্তির অগ্রদূত। কোন সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ তার বিরুদ্ধে কটুক্তি করতে পারেনা। নবীজি সা. এর অবমাননা কোন সভ্য মানুষ মেনে নিতে পারেনা। নুকুল শর্মা নবীজির বিরুদ্ধে কথা বলে সারা বিশ্বের শুধু মুসলমান নয়, বিশ্বের সকল শান্তিপ্রিয় মানুষের মনে আঘাত দিয়েছে।
সমাবেশ শেষে সিটি পয়েন্ট থেকে পুনরায় বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি আম্বরখানায় গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আজাদ দ্বীনি এদারার সভাপতি, প্রবীন আলেম মাওলানা জিয়া উদ্দিন বলেন— জাতীয় সংসদে একজন এম.পি জেহাদের বিরুদ্ধে কথা বলে ইসলাম বিরোধী ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। জেহাদের বিরুদ্ধে কথা বলে কেউ সত্যিকার মুসলমান থাকতে পারেনা। জিহাদ কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে।
সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন— মাওলানা আলিম উদ্দিন দুর্লভপুরী, জামেয়া জালালিয়ার মুহতামিম মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, রেঙ্গা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মুহিউল ইসলাম বুরহান, মাওলানা আব্দুল খালিক ছাখতা, কৌড়িয়া মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মুহসিন আহমদ, গহরপুর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু, সিলেট জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুশতাক আহমদ খান, মাওলানা খলিলুর রহমান, শামীমাবাদ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ শামীম আহমদ।
দারুল কুরআন মাদরাসার মুহতামিম, সাবেক এম.পি শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মাওলানা হাবীবে রব্বানী, জামেয়া দরগার নাজিমে তালিমাত মাওলানা আতাউল হক জালালাবাদী, নয়াসড়ক মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা সাইফুল্লাহ, ঠিকরপাড়া মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা লুকমান আহমদ, মাওলানা হাবীব আহমদ শিহাব, মাওলানা আতাউর রহমান, লামারগ্রাম মাদরাসার মুফতি আবুল হাছান, কানাইঘাট মাদরাসার মাওলানা সামছ উদ্দিন, মাওলানা কারী হারুনুর রশিদ, মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ, মেজরটিলা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল্লাহ, মাওলানা তালেব উদ্দিন, মাওলানা আবুল হুসেন চতুলী, মাওলানা আব্দুল মালেক, মাওলানা জাহিদ উদ্দিন,মাওলানা গাজী রাহমাতুল্লাহ, মাওলানা ফয়জুল হক, মাওলানা আব্দুল জলিল, মাওলানা আব্দুল মালিক, মাওলানা আতিকুর রহমান, মাওলানা এমরান আলম প্রমুখ।
সমাবেশ পরিচালনা করেন— কাজির বাজার মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা সামিউর রহমান মুসা, মাওলানা জুনায়েদ কিয়ামপুরী, মাওলানা আহমদ সগির, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, মুফতি রশিদ আহমদ, মাওলানা নেয়ামাতুল্লাহ খাসদবিরী।
সমাবেশের পক্ষ থেকে সরকারের কাছ ৫ দফা প্রস্তাব পাঠ করেন। পাঁচ দফা দাবি হলো— ভারতের ক্ষমতাসীন দলের সাবেক মুখপাত্র নুপুর শর্মা ও বিজেপি নেতা নবীন কুমার জিন্দালকে গ্রেফতার করতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য ভারত সরকারের প্রতি জোর দাবি, নবী সা. অবমাননার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে ভারতের মুসলমানদের উপর নেমে আসা জুলুম নির্যাতন, নিপীড়ন ও বুলডোজার দিয়ে মুসলমানদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে দেয়ার ঘটনায় সমাবেশ থেকে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় এবং মুসলমানদের উপর জুলুম নির্যাতন বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি, অনতিবিলম্বে বাংলাদেশে নিয়োজিত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানানো ও সংসদে নিন্দা প্রস্তাব আনার দাবি, দেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের দাবি ও দেশের মুসলমানদের প্রতি বিশ্বনবী সা. এর সীরাতচর্চা ব্যাপক করার দাবি জানানো হয়।