বন্যার থাবায় যোগাযোগ ব্যবস্থা লন্ডভন্ড : ৬২১ কিলোমিটার সড়ক কঙ্কাল
অতিথি সংবাদদাতা

সদরুল আমিন, ছাতক (সুনামগঞ্জ) থেকে : স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সুনামগঞ্জের ছাতকে যোগাযোগ ব্যবস্থা লন্ডভন্ড হয়েছে পড়ে। উপজেলা সদরের সাথে যোগযোগ রক্ষাকারী সকল রাস্তা-ঘাটসহ ছাতক-সিলেট সংযোগকারী একমাত্র রেলপথটিও বন্যার প্রবল স্রোতে তছনছ হয়ে পড়েছে। একদিকে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে রেলপথ আর অন্য দিকে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে উপজেলার প্রায় সব কটি সড়ক। এসব অনুপযোগী সড়ক দিয়েই অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে লোকজন। সড়ক ও রেলপথ সংস্কারের কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি।
উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী প্রায় ৬২১ কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে। অস্থিত্বহীন হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি সড়ক। কোনো-কোনো সড়কের বিশাল অংশ ভেঙে খালের সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ব্রিজেরই এপ্রোচের মাটি সরে গিয়ে বিপদজনক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
ছাতক উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী— ৬২০ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৩৬৩ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার কাঁচা, ১৫৩ দশমিক ০২ কিলোমিটার বিটুমিন, ২ দশমিক৮৩ কিলোমিটার ইট সলিং এবং ১০০ দশমিক ৭৪ আরসিসি সড়ক রয়েছে। এসব সড়কের কোনটিই অক্ষত অবস্থায় নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে— গৌরীপুর-শিমুলতলা, কৃষ্ণ চৌধুরী সড়ক সম্পূর্ন নষ্ট হয়ে গেছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে রায়সন্তোপুর সড়ক, কৈতক-সিরাজগঞ্জবাজার সড়ক, চরমহল্লা ইউপি থেকে কপলা ভায়া কামরাঙ্গি সড়ক, হাসনাবাদ-নয়া লম্বাহাটি সড়ক, ছাতক-আন্ধারীগাঁও-জাউয়া সড়ক, শ্যামপাড়া-কান্দিগাঁও সড়ক ও ছৈলা-গনীপুর সড়ক। এ ছাড়া বুড়াইরগাঁও-আলমপুর-খাইরগাঁও সড়ক, কালারুকা পয়েন্ট-কালারুকা বাজার ভায়া তাজপুর সড়ক, বড়কাপন-কপলাবাজার সড়ক, জালালপুর-লামা রসুলগঞ্জ সড়ক, ছনবাড়ি বাজার সড়ক, জাউয়া লক্ষমসোম-কচুরগাঁও সড়ক, গোবিন্দগঞ্জ-ধারনবাজার-আমেরতল ভায়া রুক্কা সড়ক, ছৈলা-দশঘর সড়ক, জোড়াপানি-সিঙ্গেরকাচ সড়ক, গনেশপুর ফেরীঘাট-ইসলামপুর মাদ্রাসাবাজার সড়ক, নোয়ারাই-বালিউড়া সড়ক, কালপিুর-হায়দরপুর সড়ক, মঈনপুর-আলীগঞ্জ সড়ক, বিলপার সড়ক ও ডাকবাংলা-মোগলপাড়া সড়কের উপরের অংশ বন্যার পানির স্রোতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে— উপজেলার সদরের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী ক্ষতিগ্রস্থ ২৪টি সড়কের মেরামত করতে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার প্রয়োজন।
উপজেলা প্রকৌশলী আফসার আহমদ জানান— বন্যায় এলজিইডির নিয়ন্ত্রণাধীন সড়কের মধ্যে প্রায় ২৫০-৩০০ কিলোমিটার সড়ক বিভিন্নভাবে নষ্ট হয়েছে। সড়কগুলো পুরোপুরি সচল করতে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। ইতিমধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মেজারম্যান্ট ও প্রয়োজনীয় চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান— বন্যায় ছাতক উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে প্রচুর অর্থ ও সময়ের প্রয়োজন।
এদিকে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও বাণিজ্যিক দিক বিবেচেনায় সিলেট-ছাতকবাজার ৩৫ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপিত হয় ১৯৫৪ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিয়মিতভাবে রেল চলাচল অব্যাহত থাকলেও ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে সারা দেশের ন্যায় ছাতক-সিলেট রেলপথে রেলে চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে এ লাইনটি আর সচল করা হয়নি।
সম্প্রতি বন্যার পানির তীব্র স্রোতে ছাতক-আফজলাবাদ পর্যন্ত রেল লাইনের প্রায় ১৩ কিলোমিটার লন্ডভন্ড হয়ে পড়ে। প্রাচীনতম রেলপথের মাটি ও পাথর ভেসে গিয়ে ঝুলে আছে লাইন ও স্লিপার। লাইনের বিভিন্ন অংশে সৃষ্টি হয়েছে বড়-বড় গর্ত। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা কেন্দ্র ও শিল্প শহর ছাতক থেকে পাথর, বালু, চুনাপাথর, সিমেন্ট ও কমলালেবুসহ মালামাল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করতে এ রেলপথটি ছিল অন্যতম মাধ্যম। রেল যোগাযোগ ও সহজলব্য কাঁচামালের উপর নির্ভর করে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের একমাত্র কংক্রিট স্লিপার কারখানা।
বন্যায় তছসছ হওয়া প্রাচীনতম রেলপথটি মেরামত করে পুনরায় চালু করার দাবি তুলেছেন এখানের সাধারন মানুষ।




