রেলের অব্যবস্থাপনা: চার ঘণ্টা বৈঠকের পর আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা রনির
সময় সিলেট ডেস্ক

রেলের অব্যবস্থাপনা দূর করতে ১৯ দিন অবস্থানের পর ছয় দফা দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থগিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। সোমবার (২৫ জুলাই) বিকালে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে চার ঘণ্টার বৈঠকের পর দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থাগিতের ঘোষণা দেন প্রতিবাদী এই তরুণ।
রেলে অব্যবস্থাপনা দূরে ট্রেনের টিকিটে কারসাজি বন্ধ করাসহ ছয় দফা দাবিতে ৭ জুলাই কমলাপুরে অবস্থান নিয়ে একাই আন্দোলন শুরু করেন। তার একক আন্দোলন ব্যাপক আলোচিত হয়। টিকিট না পাওয়া হাজারো মানুষ সংহতি জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমজুড়ে ছিলেন তিনি।
সোমবার বিকালের বৈঠকের পর জানানো হয়— দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না নজরদারিতে রাখতে রনিকে রেলের অংশীজন কমিটির সদস্য করা হবে।
রনি জানান— তার আন্দোলন ব্যবহার করে তৃতীয় পক্ষ যাতে সুবিধা নিতে না পেরে, সেজন্য কমলাপুর স্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। গত বৃহস্পতিবার কমলাপুর স্টেশনে শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলার ঘটনায় দায়ী এবং শনিবার স্টেশনে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো বীর মুক্তিযোদ্ধাকে যারা স্টেশনে প্রবেশ করতে দেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
রেল কর্তৃপক্ষ শুরুতে রনির দাবি আমলে নেয়নি। তাকে কখনো পাগল, কখনো সরকারবিরোধী আখ্যা দিয়ে ১০ জুলাইয়ের পর স্টেশনেও প্রবেশ করতে দেয়নি। তবে ১৯ দিন পর রেলের অবস্থান বদল হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে— প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশে রনি ও তার সঙ্গী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা। তবে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকের পক্ষপাতী ছিলেন না।
সোমবার বিকাল ৪টায় রনিকে রেলভবনে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিয়ে রনি আসেন দেড় ঘণ্টা পর। তার প্রতীক্ষায় ছিলেন রেল সচিব ড. হুমায়ুন কবীর, মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বৈঠক শেষে রাত পৌনে ১০টায় ব্রিফিংয়ে সচিব বলেন— কারসাজি বন্ধে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করে ট্রেনের টিকিট দেওয়া হবে। পরিচয়পত্র যাচাইয়ে সোমবার নির্বাচন কমিশনের চুক্তি হয়েছে। টিকিটের টাকা পরিশোধের জটিলতা এড়াতে টিকিট বিক্রির অপারেটর সহজ লিমিটেডকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। টিকিট ব্যবস্থাপনার ডিজিটালাইজেশনে রনি ও তার বন্ধুরা চমৎকার পরামর্শ দিয়েছেন। সহজ লিমিটেডের কমলাপুরের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
হুমায়ুন কবীর বলেন— অনলাইনে টিকিট ব্লক করা যায় না। সহজের সক্ষমতায় ঘাটতি থাকলে চুক্তি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রনির ছয় দফায় রেলপথ ও ট্রেন বৃদ্ধির দাবি রয়েছে। গত ১৩ বছরে ৫০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মিত হয়েছে। ৪০টি ট্রেন বেড়েছে। নব্বইয়ের দশকে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে কর্মী ছাটাই হওয়ায় রেলে জনবল সঙ্কট তীব্র। সে কারণে যাত্রীদের পুরোপুরি সেবা দেওয়া যায় না। রনির দাবি মতো, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে নির্দিষ্ট চলন্ত ট্রেনের ভেতরেই কোথাও ট্যাপ বসানো যায় কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। ট্রেনে খাবার দাম বাজার দরের চেয়ে বেশি কি না তা দেখতে কমিটি করা হবে। দাম বেশি হলে ক্যাটারিং সেবা দানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মহিউদ্দিন রনি বলেন— কিছু দাবি রাতারাতি পূরণ অসম্ভব তা বৈঠকে বুঝতে পেরেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রেখে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করছেন। অংশীজন সভায় যদি দেখেন, দাবি পূরণে কাজ হচ্ছে না, তাহলে ফের আন্দোলন করবেন।
টাকা কেটে নিয়েও টিকিট দেওয়া হয়নি- এ অভিযোগেই আন্দোলনে নেমেছিলেন রনি। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ কারণে সহজ লিমিটেডকে ২ লাখ জরিমানাও করেছে। তবে সোমবার বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি রনির অভিযোগ খারিজ করে সহজ লিমিটেড বলেছে, কোনো অবহেলা ছিল না তাদের।




