কুশিয়ারা কেড়ে নিল ৬০ পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই
অতিথি সংবাদদাতা
গোলাম সারোয়ার, জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে : সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রানীনগর গ্রামে নদীর ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে তীরে বসবাস করা মানুষ। ইতিহাসের ভয়াভহ বন্যার পর গত কয়েকদিনে এই গ্রামে নদী ভাঙনে ৬০টি পরিবারের ৯০ বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিশেষ করে বন্যার পর নদীতে ভাঙন বেড়েছে।
স্থানীয়রা জানায়— গত ৪ সপ্তাহ ধরে নদীতে ভাঙন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত তা অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলোর টিন, কাঠ’সহ বিভিন্ন আসবাবপত্র স্তুপ করে রাখা হয়েছে রাস্তার ওপর। যাদের কিছুটা সামর্থ্য আছে তারা ওই সড়কের ওপরেই নতুন করে কোনমতে ঘর তুলে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন।
প্রায় ৩০ বছর পূর্বে রানীনগর গ্রাম সৃষ্টি হয়েছিল, দিরাই উপজেলার সুরিয়ারপাড় গ্রাম জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের বাউধণ, স্বজনশ্রী, রানীগঞ্জ ইউনিয়নের রানীগঞ্জ বাজার, বাগময়না গ্রাম থেকে লোকজন এসে বসবাস করে আসছে।শেষ পর্যন্ত এই গ্রামে মাথা রাখার স্থান চোখের সামনে ভেঙ্গে যাচ্ছে দেখে দিশেহারা হয়ে যাচ্ছেন।
এখন এই পর্যন্ত তেরা মিয়া, নুরুল আমিন, সাইদুল আমিন অভিনাস দাশ, দেবন্দ দাস, জামাল মিয়া, সমসুল হক, ফখরুল মিয়া, দিপালী দাশ, নিপেন্ঠ দাশ, সশিন্দ দাশ, মনিন্ড দাশ, সিতাব আলী, নুর মিয়া, কাচা মিয়া, কালা মিয়া, আছাব মিয়া, আবুল হোসেন, নুরুল হক সঈদুল আমিন’সহ আরো অনেকেই বাড়ী ভেঙ্গে গেছে। এই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ শ্রমিক। দিন আনে দিন খায় এছাড়াও অনেকেই কৃষি কাজ, ভাঙারি ব্যবসা এবং মুদি দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ফলে এখানকার বাসিন্দাদের দিন-রাত কাটছে আতঙ্কে।
স্থানীয়রা আরো জানায়— দিন রাত যে কোন সময় কুশিয়ারা পাড় ভেঙ্গে ভয়ঙ্কর বেগে ঘরের দিকে আসছে। চিৎকার করে আশপাশের লোকদের ডেকে তুলে ঘর ভেঙে সরাতে শুরু করি। এরই মধ্যে কয়েকটি ঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের বসত ভিটা, গাছপালা ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
কেমন আছেন জানতে চাইলে তারা জানান— কেমন আর আছি, দেন না? কষ্টের কোনো শেষ আছে? নদী ভাঙার পর জীবন কি আর আগের মতো চলে? টাকা-পয়সা থাকলে অন্যের জায়গা গিয়ে ঘর বানিয়ে বসবাস করতাম। টাকা-পয়সা যে কামাই করমু, সে পথও তো নাই। করোনা ও বন্যায় এটাও শেষ করে দিছে। একবার এইটা, আরেকবার ওইটা। এইভাবে আইলাই বিলাই কামে কোনো লাভ আছে? কোনো লাভ নাই। যদি মনে করেন, একাধারে একটা কাম করতাম, তবেই না কিছু টাকা জোগাইতে হাইত্তাম। এখন দ্যাখেন তো, আরেকজনের জায়গাতে থাকি। এটা কেউ ভালোভাবে নেয় না।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ছদরুল ইসলাম জানান— রানীনগর গ্রামের নদী ভাঙ্গনের স্থান পরিদর্শন করে আসছি। এ বিষয়টি আমি পরিকল্পনামন্ত্রী মহোদয়কে অবগত করেছি। মন্ত্রী মহোদয় আগামীতে ব্রীজ পরিদর্শন করতে আসলে নদী ভাঙন স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। আশা করি ভাঙ্গন এলাকার লোকজনের জন্য কিছু করতে পারবো।