ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে সড়ক অবরোধ
বরিশাল সংবাদদাতা

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার বোয়ালিয়া জে এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইদ্রিসুর রহমান স্বপন খানের বিরুদ্ধে একই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব এবং যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদ এবং অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে তারা বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের বোয়ালিয়া এলাকায় এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।
শিক্ষার্থীদের প্রায় আধাঘন্টাব্যাপি সড়ক অবরোধের কারণে বরিশাল-পটুয়াখালী-বরগুনা এবং কুয়াকাটা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ভোগান্তিতে পড়তে হয় যানবাহনের যাত্রী এবং শ্রমিকদের। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এদিকে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগটি সন্দেহজনক বলে মনে করছে পুলিশ। ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রধান শিক্ষককে ফাঁসানো হতে পারে বলে ধারনা তাদের। তাই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত ছাড়া মামলা গ্রহণ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বাকেরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সত্য রঞ্জন খাসকেল।
এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন— ‘প্রধান শিক্ষক ইদ্রিসুর রহমান স্বপন খান অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ছাত্রীকে বিভিন্ন সময় অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। তিনি ক্লাসে প্রবেশ করে ওই ছাত্রীকে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করেন। তার অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নানাভাবে হয়রানি এবং পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।

এর ধারাবাহিকতায় গত ১ আগস্ট ক্লাস রুমে প্রবেশ করে ওই ছাত্রীর খাতা দেড় ঘণ্টা আটকে রাখেন। একই সময় তিনি শিক্ষার্থীর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে যৌন হয়রানি করে। পরে ওই ছাত্রী তার সহপাঠীদের সহযোগিতায় বাড়িতে চলে যায় এবং বিষয়টি তার মাকে জানায়। এই ঘটনায় শিক্ষার্থীর মা বাকেরগঞ্জ থানায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
এদিকে শিক্ষার্থীকে কুপ্রস্তাবের বিষয়টি জানাজানি হলে ফুসে ওঠেন স্কুলের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা। এর প্রতিবাদে তারা বৃহস্পতিবার সকালে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ সময় তারা অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ইদ্রিসুর রহমান স্বপন খানকে স্কুল থেকে প্রত্যাহারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এ প্রসঙ্গে বাকেরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সত্য রঞ্জন খাসকেল বলেন— বুধবার রাতে শিক্ষার্থীর মা থানায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা নিতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তবে অভিযোগের পেছনে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। প্রধান শিক্ষকের সাথে ম্যানেজিং কমিটির বিরোধের একটি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাই বিষয়টি সাজানোও হতে পারে।
তিনি বলেন— ‘আমরা চাইলেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা নিতে পারি। কিন্তু ঘটনাটি যদি সাজানো হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে কোনো মানুষকে আমরা অহেতুকভাবে হয়রানি করতে চাইনা। তাছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন শিক্ষক। এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বাকেরগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, ম্যানেজিং কমিটি, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এরই মধ্যে আমরা বসেছিলাম। সেখানে উভয় পক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। অভিযোগের সত্যতা না পাওয়া পর্যন্ত মামলা নেয়া সম্ভব না। তাই বিষয়টি আরো ভালোভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগের সামান্যতম প্রমাণ পেলেও মামলা রুজু করবো।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বাকেরগঞ্জ সার্কেল) সুদীপ্ত সরকার বলেন— ‘শিক্ষার্থীদের অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীর মা বাদী হয়ে বাকেরগঞ্জ থানায় যে অভিযোগটি দিয়েছেন সেটার তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।




