সিলেটসহ ১৪ রুটের ‘গরিবের বাহন’ খ্যাত ৪২ লোকাল ট্রেন চালুর খবর নেই
সময় সংগ্রহ

করোনার সময় সিলেট রুটসহ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে বন্ধ হয়ে যাওয়া ১৪টি রুটের ৪২টি লোকাল ট্রেন আর চালু হয়নি। কবে নাগাদ এসব ট্রেনের চলাচল শুরু হবে, তা নিশ্চিত করতে পারছেন না রেলওয়ের কর্মকর্তারা। স্বল্প ভাড়ার কারণে ‘গরিবের বাহন’ হিসেবে পরিচিত এসব ট্রেনে বছরে যাতায়াত করতেন ১৫ থেকে ২০ লাখ যাত্রী।
ট্রেনগুলো বন্ধ থাকায় যাতায়াত ভোগান্তিতে পড়েছেন স্বল্প আয়ের লোকজন। তাঁদের এখন বেশি ভাড়া দিয়ে সড়কপথে চলাচল করতে হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সড়ক পরিবহনে ভাড়া বেড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রী কল্যাণ সমিতি এসব ট্রেন চালুর দাবিতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এই ব্যাপারে মনোযোগ কম বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের অধীনে রয়েছে সিলেট বিভাগ। এছাড়াও রয়েছে— ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগ। মূলত পদ্মা ও যমুনা নদীর এ পারের অঞ্চলকে নিয়ে রেলের পূর্বাঞ্চল।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী— করোনা সংক্রমণের আগে সিলেট-ছাতকবাজার পথে চারটি লোকাল ট্রেন চলাচল করত। এখন একটিও চলে না। চট্টগ্রাম নগরের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ হচ্ছে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুট। এই পথের চারটি ট্রেনও বন্ধ। এখন সে পথে দুই জোড়া ডেমু ট্রেন চলে। তা-ও মাঝেমধ্যে বন্ধ থাকে। চট্টগ্রাম-সিলেট পথে জালালাবাদ এক্সপ্রেস নামের ট্রেন চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
এ ছাড়া আখাউড়া-সিলেট ও লাকসাম-চাঁদপুরের মধ্যে কোনো ট্রেন চলে না। বর্তমানে ঢাকা-ময়মনসিংহ, আখউড়া-সিলেট, লাকসাম-নোয়াখালী, ঢাকা-জয়দেবপুর, নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট, চট্টগ্রাম-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ-দেওয়ানগঞ্জ ও ময়মনসিংহ-ভৈরববাজার রুটগুলো সচল থাকলেও কোনোটিতে দুটি, কোনোটিতে চারটি ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন— যাত্রীসেবার নামে রেলওয়ে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। লোকাল ট্রেনগুলো বন্ধ থাকায় কম আয়ের লোকজনই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ট্রেনগুলো চালু থাকলে সাধারণ মানুষ যেমন সেবা পেতেন, তেমনি যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রেও রেলওয়ে তার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারত।
লোকাল ট্রেনগুলো আবার দ্রুত চালু করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সাবেক জাতীয় পর্ষদ সদস্য দেলোয়ার মজুমদার। তিনি বলেন— করোনার পর নানা কারণে গণপরিবহনের ভাড়া বেড়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষের যাতায়াতের জন্য বড় ভরসা ছিল এসব লোকাল ট্রেন। তাঁরা কম খরচে যাতায়াত করতে পারতেন। অথচ এসব ট্রেন চালুর ব্যাপারে কোনো গরজ নেই রেলওয়ের। লোকবল ও ইঞ্জিনসংকট থাকলে আগে কীভাবে এসব ট্রেন চলাচল করেছে? কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কথাও বিবেচনায় রাখা জরুরি।
করোনার আগে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের অধীনে ১৮৮টি ট্রেন চলাচল করত। এগুলোর মধ্যে ৪৮টি আন্তনগর ট্রেন। বাকি সব কটি লোকাল (মেইল, লোকাল ও কমিউটার) ট্রেন হিসেবে চলাচল করে। করোনা সংক্রমণ শুরু হলে ২০২০ সালের মার্চের শেষের দিকে সব যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অর্ধেক আসনের টিকিট বিক্রিসহ নানা বিধিনিষেধ নিয়ে ৩১ মে থেকে আট জোড়া ট্রেন চালু করা হয়।
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে সব আন্তনগরসহ বেশির ভাগ ট্রেন চালু হয়। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারিতে বিধিনিষেধ পুরোপুরি উঠে গেলে চলাচল শুরু করে ১৪৬টি ট্রেন। কিন্তু লোকাল ট্রেনের ৪২টি আর চালু হয়নি। এসব ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় রেলওয়ের যাত্রী পরিবহন ও আয়ও কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩২ শতাংশ আয় কম হয়েছে। যাত্রী কমে গেছে ২৫ শতাংশ।




