বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের ৫১তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ
সময় সিলেট ডেস্ক
আজ শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের ৫১তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৭১ সালে কমলগঞ্জের দলই সীমান্তে পাক সেনাদের একটি ব্যাঙ্কারে গ্রেনেড হামলা চালাতে গিয়ে পাক সেনাদের ছোড়া গুলিতে শহীদ হন হামিদুর রহমান।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনে সম্মুখযুদ্ধে দেশের জন্য জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খোরদা খালিশপুর গ্রামের সন্তান সিপাহী হামিদুর রহমান।
মুক্তিযোদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
মাত্র ১৮ বছর বয়সে শহীদ হওয়া সিপাহী হামিদুর রহমান দেশের ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ পদকপ্রাপ্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ।
১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের শেষদিকে কমলগঞ্জের দলই সীমান্ত এলাকায় প্রচন্ড যুদ্ধ চলছিল। চারদিকে চা বাগান, মাঝখানে দলই সীমান্ত চৌকি। দলই সীমান্ত চৌকি থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কমলপুর শহরে ছিল মুক্তিবাহিনীর সাবসেক্টর ক্যাম্প। হামিদুর রহমান প্রথম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সি কোম্পানির হয়ে দলই সীমান্তের ফাঁড়ি দখল করার অভিযানে অংশ নেন।
সব প্রস্তুতি নিয়ে ২৮ অক্টোবর ভোর রাতে লেফটেন্যান্ট কাইযুমের নেতৃত্বে একটি দল পাক সেনাদের উপর চতুর্দিক থেকে সাঁড়াশি আক্রমন চালানো হয়। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে অংশ নেয় সে অভিযানে। ব্যাপক গোলাবর্ষণে পাক সেনাদের ক্যাম্পে আগুন ধরে যায়। সামনে দুই প্লাটুন ও পেছনে এক প্লাটুন সৈন্য অবস্থান নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে শক্র অভিমুখে।
শত্রু অবস্থানের কাছাকাছি এলে একটি মাইন বিস্ফোরিত হয়। মুক্তিবাহিনী সীমান্ত ফাঁড়ির খুব কাছে পৌঁছে গেলেও ফাঁড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত হতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিবর্ষণের জন্য আর অগ্রসর হতে পারছিলো মুক্তিবাহিনী পাকিস্তান বাহিনীর মেশিনগান পোস্টে গ্রেনেড হামলার সিদ্ধান্ত নেয়।
গ্রেনেড ছোড়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় হামিদুর রহমানকে। তিনি পাহাড়ি খালের মধ্যদিয়ে বুকে হেঁটে গ্রেনেড নিয়ে আক্রমণ শুরু করেন। দুটি গ্রেনেড সফলভাবে মেশিনগান পোস্টে আঘাত হানে, কিন্তু তার পরপরই হামিদুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। সেই অবস্থাতেই তিনি মেশিনগান পোস্টে গিয়ে সেখানকার দুজন পাকিস্তানি সৈন্যের সঙ্গে হাতাহাতি যুদ্ধ শুরু করেন।
এভাবে আক্রমণের মাধ্যমে হামিদুর রহমান এক সময় মেশিনগান পোস্টকে অকার্যকর করে দিতে সক্ষম হন। এই সুযোগে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল উদ্যামে এগিয়ে যান এবং শত্রু পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে সীমানা ফাঁড়িটি দখল করতে সমর্থ হন। কিন্তু হামিদুর রহমান বিজয়ের স্বাদ আস্বাদন করতে পারেননি, ফাঁড়ি দখলের পরে মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হামিদুর রহমানের মৃতদেহ উদ্ধার করেন।
হামিদুর রহমানের মৃতদেহ সীমান্তের অল্প দূরে ভারতীয় ভূখন্ডে ত্রিপুরা রাজ্যের হাতিমেরছড়া গ্রামের স্থানীয় এক পরিবারের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।
১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধের পর দলই সীমান্ত ফাঁড়ির বিজিবির (তৎকালীন বিডিআর) পক্ষে স্থানীয়ভাবে একটি নাম ফলক স্বরূপ স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয় বিজিবির সীমান্ত ফাঁড়ির সামনে।
২০০৫ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মরহুম এম. সাইফুর রহমান দলই সীমান্ত এলাকায় বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতি সৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে ধলই সীমান্তে দলই চা বাগানের জমি অধিগগ্রহণ করে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। সে সময় স্থানীয় সাংবাদিকদের লিখিত আবেদন ও এলাকাবাসীর দাবিতে ২০০৭ সালের ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার হামিদুর রহমানের দেহ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়।
সেই অনুযায়ী ২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রাইফেলসের একটি দল ত্রিপুরা সীমান্তে হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ গ্রহণ করেন এবং যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে কুমিল্লার বিবিরহাট সীমান্ত দিয়ে শহীদের দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানকে ঢাকার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।