বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরে নির্বাচন : আলোচনায় দুই চৌধুরীও
সময় সিলেট ডেস্ক
সিলেটের বিশ্বনাথ পৌরসভা ও ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আজ। বিশ্বনাথে মেয়র পদে ৯ জন এবং ওসমানীনগরে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী হয়েছেন।
তবে এদের বাইরে এই দুই উপজেলায় ভোটের মাঠে আলোচনায় রয়েছেন আরও দুই নেতা। তাদের ওপরই এ দুই জায়গায় আওয়ামী লীগের জয়-পরাজয় নির্ভর করছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তারা হলেন— জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়— সিলেটের বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে সিলেট-২ আসন। এই আসনে আওয়ামী লীগ দুটি বলয়ে বিভক্ত। এই দুই বলয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। আগামী সংসদ নির্বাচনে এই দুজনই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাচ্ছেন। নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের এই দুটি নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে দুই নেতার কাছে।
জানা যায়— বিশ্বনাথে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া ফারুক আহমদ এবং ওসমানীনগরে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. শামীম আহমদ— এই দুজনই আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত। তাই এই দুজনের বিজয় নিশ্চিত করতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন আনোয়ারুজ্জামান। বর্তমানে দেশেও অবস্থান করছেন তিনি।
অপরদিকে, অনেকটাই শাখের করাতের মধ্যে আছেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথে দলীয় প্রার্থী জিতলে নিজ সংসদীয় আসনের দুটি এলাকায় বিরোধী বলয় শক্তিশালী হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি থাকা অবস্থায় নিজের এলাকায় দলের প্রার্থী হারলে দলের হাইকমান্ডের বিরাগভাজন হওয়ারও শঙ্কা রয়েছে।
জানা যায়— ওসমানীনগরের চাইতে বিশ্বনাথে দলীয় প্রার্থীর বিজয়ে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে শফিকের ভোট ব্যাংক। প্রকাশ্যে শফিকুর রহমান চৌধুরী দলীয় প্রার্থী ফারুক আহমদের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। তবে তার অনুসারীদের ভোট শেষ পর্যন্ত কার বাক্সে পড়বে এনিয়ে রয়েছে জল্পনা।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান— আগামী সংসদ নির্বাচনে শফিকুর রহমান ও আনোয়ারুজ্জামান দু’জনই আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এর আগে পৌরসভা নির্বাচনে এই দুই নেতাই নিজেদের অবস্থান শক্ত করার মিশন হিসেবে নিয়েছেন। ফলে প্রার্থী না হয়েও এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই প্রভাবশালী নেতা আলোচিত হচ্ছেন।
তবে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন— আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে, তবে কোন বিভক্তি নেই। তিনি বলেন— নৌকার প্রশ্নে কোন আপোস নেই। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী যিনিই হবেন, আমরা তার সঙ্গে আছি। পুরো দল ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার বিজয়ে কাজ করছে।
বিশ্বনাথ পৌরসভায় নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন ৯ জন। বুধবার প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ পৌরসভায় প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে নৌকার প্রতীকে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ ছাড়াও মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন— দুইবারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মুহিবুর রহমান (জগ), উপজেলা বিএনপির সদ্য বহিস্কৃত সভাপতি ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন (হ্যাঙার), নিউহাম বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিস্কৃত) মোমিন খান মুন্না (মোবাইল ফোন), যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা শফিক আহমদ (নারিকেল গাছ), উপজেলা জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শিব্বির আহমদ (খেজুর গাছ) ও উপজেলা আল ইসলাহ’র সভাপতি তালুকদার ফয়জুল ইসলাম (চামচ)।
এলাকার কয়েকজন ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে— মেয়র পদে ৯ জন প্রার্থী থাকলেও তিনজনের মধ্যেই মূল লড়াই হতে পারে। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান, আওয়াম লীগের প্রার্থী ফারুক আহমদ ও বিএনপির বহিস্কৃত নেতা জালাল আহমদের মধ্যে মূল লড়াই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে বলে ধারণা তাদের। তবে শেষ সময়ে নিউহাম বিএনপি নেতা মোমিন খান মুন্নাও মূল লড়াইয়ে ওঠে আসতে পারেন বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ।
এদের মধ্যেই একজন শেষ হাসি হাসতে পারেন বলে মত ভোটারদের। তবে দলীয় কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অনেকটা চ্যলেঞ্জের মুখে আছেন বলেও জানান তারা।
মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে মুহিবুর রহমান ও জালাল উদ্দিন সাবেক জনপ্রতিনিধি। ফলে তাদের দুজনেরই রয়েছে নিজস্ব ভোট ব্যাংক। ব্যক্তিগত প্রভাবও রয়েছে এলাকায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের বিরোধ। এতে মুহিব ও জালাল আরও সুবিধা পাবেন বলে মনে করছেন ভোটাররা।
পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে স্থায়ী-অস্থায়ী ২০ কেন্দ্রের ১১৮টি কক্ষে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ। এখানে মোট ভোটার ৩৫ হাজার ৪৭০ জন।
বিশ্বনাথ পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও মৌলভীবাজার জেলা নির্বাচন অফিসার আলমগীর হোসেন বলেন— নির্বাচনকে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
অপরদিকে, চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তিন প্রার্থীর মধ্যে দুজন দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। তারা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শামীম আহমদ (নৌকা প্রতীক) ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী মো. ছইদুর রহমান চৌধুরী (দেয়ালঘড়ি)। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মো. কামরুল ইসলাম (ঘোড়া প্রতীক)।
ভোটার ও স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়— বিএনপি নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি। তবে নির্বাচনে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কামরুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। মূলত আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম আহমদের সঙ্গে কামরুলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কামরুলকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি।