বাঁধ কেটে দেয়ায় শান্তিগঞ্জে ৩০০ একর বোরো জমি অনাবাদি থাকার আশংকা
শান্তিগঞ্জ সংবাদদাতা
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় পিঠাপশী গ্রামের পশ্চিমে জাইর হাওরের বন হাইরে রাতের আধারে বাঁধ কেটে পানি শুকিয়ে মাছ ধরার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পানির অভাবে ৩০০ একর বোরো জমি চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিতায় পড়েছেন কৃষকেরা। ফলে প্রায় দেড় কোটি টাকার বোরো ফসল থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
কৃষকদের অভিযোগ— শান্তিগঞ্জ উপজেলার পিঠাপশী গ্রামের পশ্চিমে জাইর হাওরের বন হাইর বাঁধটি প্রতি বছর পিঠাপশী গ্রামবাসীর অর্থায়নে মেরামত করে সেচ মৌসুমের জন্য হাওরের পানি সংরক্ষণ করে আসছেন। চলতি বছর হাওরে বোরো জমি চাষাবাদের কাজ শুরু করেছেন স্থানীয় বর্গাচাষী, কৃষক ও গৃহস্থরা।
গত বুধবার ভোর রাতে স্থানীয় ঘোড়াডুম্বুর গ্রামের প্রভাবশালী জনৈক ব্যক্তি গ্রামের আরো ১০ থেকে ১২ জন মিলে জাইর হাওরে মাছ ধরতে পানি সংরক্ষণের জন্য করা বন হাইর বাঁধটি কেটে হাওরের পানি শুকিয়ে পার্শ্ববর্তী বোঘলা নদীতে ফেলে দেয়। এতে পিঠাপশী গ্রামের প্রায় ৫০০ কৃষক পরিবারের লোকজনদের ৩০০ একর বোরো জমি পানির অভাবে অনাবাদী হওয়ার আশংকা রয়েছে। এতে গ্রামবাসী প্রায় দেড় কোটি টাকার বোরো ফসল থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রশাসনিকভাবে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলেও চলতি বছর বোরো ধানের চারা চাষাবাদ থেকে বঞ্চিত হবেন স্থানীয় কৃষকরা।
পিঠাপশী গ্রামের ষাটোর্দ্ধ কৃষক নায়েব আলী বলেন— হাওরে আমার ৩০ কেদার জমি রয়েছে। মাছ ধরার জন্য গ্রামের প্রভাবশালী লোকজন পাশের গ্রাম থেকে এসে আমাদের পানি রক্ষার জন্য করা বাঁধ কেটে দিয়েছে এবং মাছ ধরেছে। এখন আমাদের জমিতে সেচ করার মতো পানি না থাকায় পানির অভাবে আমাদের হাওরের বোরো জমি চাষাবাদ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পিঠাপশী গ্রামের গৃহস্থ ৭০ কেদার জমির গৃহস্থ ইলিয়াছ মিয়া বলেন— আমাদের হাওরের অধিকাংশ জমি সাধারণ কৃষক ও বর্গা চাষীরা চাষাবাদ করে থাকেন। আমিও আমার অধিকাংশ জমি বর্গা চাষীদের দিয়ে চাষাবাদ করি। এখন পানির অভাবে জমি চাষাবাদ করা প্রায় অসম্ভব। পার্শ্ববর্তী বোঘলা নদী থেকে পানি আনা সম্ভব হলেও অতিরিক্ত অর্থ ও পরিশ্রম দুটোই করতে হবে।
পিঠাপই গ্রামের কৃষক ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. আক্তার হোসেন বলেন— আমি নিজেও একজন কৃষক এবং স্থানীয় হাওরে প্রায় ৩০০ একর জমি রয়েছে। অধিকাংশ জমি স্থানীয় হতদরিদ্র গ্রামের লোকজন বর্গা চাষি হিসেবে চাষেবাস করেন। এখন প্রভাবশালীরা পানি শুকিয়ে মাছ ধরার কারণে কৃষকদের বোরো জমি চাষাবাদ বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার উজ জামান বলেন— লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ নয়, একটি গ্রামবাসীর তৈরী করা বাঁধ। তাই বিষয়টি শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশকে আইনানূগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছি।