বিশ্ববাজারে কমলেও দেশে কমছেনা জ্বালানি তেলের দাম
সময় সিলেট ডেস্ক
আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে জ্বালানি তেলের দাম। টানা কয়েকদিন ধরেই দরপতন অব্যাহত রয়েছে। সোমবার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই অপরিশোধিত তেল ৭৯ ডলার ১১ সেন্টে বিক্রি হয়েছে। আর ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেল বিক্রি হয়েছে ৮৭ ডলার ১১ সেন্টে। এই দর গত দুমাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত জ্বালানি তেলের দাম কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) বলছে— আরও কয়েকদিন বাজার দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আপাতত কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন— দাম কমিয়ে সমন্বয় করা হলেও এর প্রভাব অর্থনীতিতে বা ভোক্তা পর্যায়ে কোনো কাজে আসে না। এ বিষয়ে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ১০০ ডলারের কাছাকাছি যখন উঠানামা করছিল তখন বাংলাদেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। গত ৫ আগস্ট সরকার, ডিজেল ও কেরোসিনের প্রতি লিটারের দাম ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা আর অকটেন ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করে। এর প্রভাবে দেশের যানবাহনে ভাড়া বৃদ্ধি পায়। এমনকি ট্রাক ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়া দেশের সব পণ্যের মূল্য বেড়ে যায়। সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি এক লাফে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে উঠে।
সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে— আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশেও জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে। বিশ্ববাজারে দাম কিছুটা কমলে গত ৩০ আগস্ট দেশের বাজারে লিটারে মাত্র পাঁচ টাকা কমানো হয়। তখন দুই ধরনের তেলের দামই ছিল ৯০ ডলারের উপরে।
মূলত বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় জ্বালানি তেলের দাম নিম্নমুখী হয়েছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় বড় দেশ ঋণের সুদের হার বাড়িয়েই চলেছে। তবে বিশ্ববাজারে দাম কমার ধারা কতদিন অব্যাহত থাকবে, তা নিয়ে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন। তারা বলছেন— দাম কমতে থাকলে ওপেক তেল উত্তোলন হ্রাস করলে দাম খুব একটা না-ও কমতে পারে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে— বাংলাদেশ বেশিরভাগ পরিশোধিত তেল আমদানি করে। দেশে বেশি দরকার পড়ে ডিজেল। পেট্রল আমদানি করতে হয় না, কেরোসিনও দেশেই উৎপাদন হয়। আর অকটেন কিছুটা আমদানি করতে হয়। দেশে চাহিদা অনুযায়ী পরিশোধন করার সক্ষমতা নেই বলে বেশিরভাগ পরিশোধিত ডিজেল আমদানি করতে হয়।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন— ‘বাংলাদেশে দাম কমিয়ে সমন্বয়ের দৃষ্টান্ত আছে। কিন্তু সমন্বয় হলেও এর প্রভাব অর্থনীতিতে বা ভোক্তা পর্যায়ে কোনো কাজে আসে না।’
তিনি বলেন— ‘এখন সরকার সমন্বয় করে যদি ভোক্তা পর্যায়ে প্রভাব ফেলতে পারে তবে সেটা ঠিক আছে। এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিলে সেটা ঠিক আছে।’ তেলের দাম বাড়ার কারণে যেসব জায়গায় প্রভাব পড়েছে সেসব জায়গা ঠিক করার আহবান জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন— ‘আমরা আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণ করছি। গত দুই মাস ধরে বাজার উঠানামা করছে। গত কয়েক দিনে অবশ্য বেশ খানিকটা কমেছে। আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে। যদি ৭৫ ডলারের নিচে নেমে আসে, তাহলে হয়তো সরকার চিন্তাভাবনা করবে।’