মাদারীপুরের কালকিনি: সরকারি জমি দখল করে হাসপাতাল, দোকান
সময় সংগ্রহ
মাদারীপুরে কালকিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের প্রায় ৪০ শতাংশ জমি বেদখলে চলে গেছে। সেখানে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা একাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছেন।
এর মধ্যে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে একটি চারতলা ভবনবিশিষ্ট বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, একটি দোতলা চক্ষু হাসপাতাল’সহ তিনটি টিনশেড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও একাধিক ওষুধের দোকান নির্মাণ করা হয়েছে।
কালকিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নামে দুটি মৌজায় ৬ একর ৯৬ শতাংশ জমি রেকর্ড রয়েছে। এর মধ্যে ৭৯ নম্বর পাঙ্গাসিয়া মৌজায় বিআরএস রেকর্ড অনুযায়ী জমির পরিমাণ ১ একর ৩৭ শতাংশ এবং ঝাউতলা মৌজায় ৯টি দাগে ৫ একর ৮৩ শতাংশ জমি রেকর্ড রয়েছে। এই জমির প্রায় ৪০ শতাংশ দখলে নিয়ে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। ওই জমিতে হাওলাদার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কালকিনি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল, শেখ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সেবা ওরাল অ্যান্ড ডেন্টাল কেয়ার, মিথুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ফুটপাত দখল নিয়েছে এসব বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়— কালকিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক পাঠাগারবিষয়ক সম্পাদক খোকন হাওলাদারের পাঙ্গাসিয়া মৌজার এক শতাংশের কম জমির মালিকানা রয়েছে। অথচ তিনি হাসপাতালের প্রায় ৫ শতাংশ জমি দখলে নিয়ে চারতলা একটি ভবন নির্মাণ করেছেন। এই ভবনে তিনি হাওলাদার ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি হাসপাতালের লাইসেন্স নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছেন। হাওলাদার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পাশেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রায় ৬ শতাংশ জমি দখলে নিয়ে দোতলা একটি ভবনে কালকিনি ইসলামি চক্ষু হাসপাতাল। এটি মালিক বাচ্চু হাওলাদার। তাঁর নামে এক শতাংশের কম জমি রেকর্ড রয়েছে। অথচ তিনিও সরকারি জমিতে স্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ করে ব্যবসা শুরু করেছেন। সরকারি জমিতে একইভাবে শেখ মঞ্জুরুল ইসলামের মালিকানাধীন শেখ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চাঁন মিয়া হাওলাদারের মিথুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও জসিম শিকদারের মালিকানাধীন সেবা ওরাল অ্যান্ড ডেন্টাল কেয়ার নামে প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়— কালকিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্ধারিত সীমানাপ্রাচীর নেই। প্রধান ফটকের দুপাশেই গড়ে উঠেছে স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনা। এসব স্থাপনায় ব্যক্তিমালিকানা একটি হাসপাতাল ও চারটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। হাসপাতাল ছাড়াও অন্তত ১০টি ওষুধের দোকান, খাবার হোটেল, মুদি দোকান রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জমিতে।
এদিকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য একাধিকবার স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ জানালেও প্রশাসনের পক্ষে সাড়া নেই বলে জানালেন কালকিনি পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নাসির হোসেন। তিনি বলেন— স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের একফোঁটা জমি খালি নাই। সব দখলে নিয়ে যে যার মতো ব্যবসা শুরু করেছেন। এসব অবৈধ স্থাপনা অচিরেই উচ্ছেদ না হলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবেশ ও চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হবে।
এ বিষয়ে খোকন হাওলাদার বলেন— ‘ওই মৌজায় আমাদের জমি আছে। নকশা পাস করে ভবন করেছি। এখানে হাসপাতালের জমি থাকলেও সেটা আমি দখল করিনি। এসব অভিযোগ রাজনৈতিক কারণে উঠেছে, যা সত্য নয়। এখানে বোঝার ভুল আছে।’
বাচ্চু হাওলাদার বলেন— ‘সরকারি জমি থাকলে সরকার আগেই দখলে যেত। আমার কাগজপত্র ঠিক আছে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস কে এম শিবলী রহমান বলেন— ‘আমাদের জমির সীমানা নির্ধারণ নেই। এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সঙ্গে আলাপ হয়েছে। এখানে একটি সার্ভে হবে। পরে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের তালিকা করে ইউএনওকে পাঠানো হবে।’
ইউএনও পিংকি সাহা বলেন— কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৪০ শতাংশের বেশি জমি বেদখলে চলে গেছে। এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন। ওই জমি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের। তাদের জমির সার্ভে ও দখলদার বিষয়ে একটি আবেদন দিতে বলেছি। সার্ভে করে দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে।
সৌজন্যে : প্রথম আলো