সিলেটে সম্পত্তি নিয়ে দুলাভাই ও শ্যালিকার লড়াই
সময় সংগ্রহ
সিলেট নগরীর দর্শনদেউড়ীতে সম্পত্তি নিয়ে শ্যালিকা ও দুলাভাইয়ের লড়াই চলছে। এ নিয়ে মুখোমুখি দু’পক্ষ। শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি শ্যালিকা ইয়াসমীন চৌধুরী একাই দখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ করেছেন দুলাভাই এনামুল হক চৌধুরী। এ নিয়ে তিনি সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন— ইয়াসমিন চৌধুরী উত্তরাধিকার সূত্রে পরিবারের সকলের সম্পত্তি একা জবরদখল করতে চায়। প্রতিমাসে ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে ভাড়া বাবদ ৫৬ হাজার টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করতে চায়।
তবে ইয়াসমীন চৌধুরীর প্রশ্ন; আমার পিতার সম্পত্তি আমি একা নিলে দুলাভাইয়ের কী? সেখানে আপত্তি জানাতে পারেন আমার মা ও বোন। তারা কোথায়। তিনি দাবি করেন— একটি ভূমিখেকো চক্রের ইন্ধনে তার দুলাভাই পুরো সম্পত্তি দখলে নিতে এ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি জীবিত থাকতে এ হতে দেবেন না বলে জানান।
এদিকে, নগরীর আম্বরখানা বড়বাজার এলাকার বাসিন্দা ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী এনামুল হক চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন— আমার চাচাতো বোন ও শ্যালিকা যুক্তরাজ্য প্রবাসী ইয়াসমিন চৌধুরী একদল সন্ত্রাসী নিয়ে গত ৪ঠা ডিসেম্বর আমার বাসার গেটে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
এ ঘটনায় এয়ারপোর্ট থানায় জিডি করেছি। এ সময় মা, ভাই ও বোনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করাসহ দোকানদার, বাসার ভাড়াটিয়া, ঘরের কাজের লোক, মসজিদের ইমামের সঙ্গে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের অভিযোগ করেন তিনি। ইয়াসমিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করে তিনি বলেন— ইয়াসমিন চৌধুরী যুক্তরাজ্য বাকলিস ব্যাংকের পাবলিক রিলেশন অফিসার থাকাকালীন তার এক ইংলিশ কলিগকে বিয়ে করে পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বেশ কয়েক বছর পরে তার স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে এক কন্যাসন্তান নিয়ে পরিবারে ফিরে আসে। ২০১২ সালের দিকে ইয়াসমিন চৌধুরী আমকারীজা ফাউন্ডেশন ও লাভদেশ নামে এনজিও সংস্থা ও ব্যবসা চালু করে। এর সুবাধে সে বাংলাদেশে আসা-যাওয়া শুরু করে। তখন আমার স্ত্রী নাজমিন চৌধুরী নগরীর দর্শনদেউড়ী এলাকায় পায়রা ৩৭-৩৮ নম্বর বাসা এবং বিয়ানীবাজারের আলীনগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম গ্রামের বাড়ির উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি দেখাশোনার দায়িত্ব দেন তাকে। ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪ বছরে ভাড়া বাবদ প্রায় ৩৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে ইয়াসমিন। আমার শ্বশুর মরহুম আব্দুল মুকিত চৌধুরীর ইচ্ছা অনুযায়ী ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে আয়ের ৩ ভাগের ১ ভাগ চ্যারিটি সংস্থায় প্রদান করা হয়। বাকি অর্থ মা, ৪ বোন ও ১ ভাই পাওয়ার কথা। কিন্তু ইয়াসমিন তাদের কারো অংশ না দিয়ে পুরো টাকাই একাই আত্মসাৎ করে। এরপর পুরো ভূ-সম্পত্তি দখল করার পাঁয়তারা শুরু করে।
উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কারণে তাকে পুলিশ আটক করেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন— ২০১৫ সালে ইয়াসমিনের মা আমার শাশুড়ি রওশন আরা চৌধুরী দেশে আসেন এবং সকলের পাওনার হিসাব দিতে বললে ইয়াসমিন উত্তেজিত হয়ে অকথ্য ভাষায় নিজ মাকে গালিগালাজ করে এবং পুলিশে দিতে উদ্যত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আমার শাশুড়িকে বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থ দেখে এবং ইয়াসমিনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ দেখে পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ডেকে নিয়ে আটক করেন। এ সময় ইয়াসমিনের কাকুতি-মিনতি দেখে মুচলেকার মাধ্যমে তাকে ছাড়িয়ে আনা হয়।
এ ঘটনায় তৎকালীন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রহমত উল্লাহ ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে পরিবারের সকলের অনিচ্ছা সত্ত্বেও যৌথ সম্পত্তি বেআইনিভাবে নিজ দখলে রাখার অভিযোগ ও ভাইবোনদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার ও সকলের নামে বিভিন্ন স্থানে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য সম্বলিত অভিযোগ দায়েরের কথাও উল্লেখ করা হয়।
তিনি বলেন— ইয়াসমিন চৌধুরী নগরীর পায়রায় বসবাস করছে। অথচ সে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে সে তার পৈতৃক বাসস্থলে থাকতে পারছে না। গত কোরবানি ঈদে কোরবানির উদ্দেশ্যে গ্রামের বাড়িতে আমি দুটি গরু পাঠালে সে গরুগুলো জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে একটি ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখে। পরে উল্টো আমিসহ আমার ফুপাতো ভাই সালেহ আহমদ খসরু, চাচাতো ভাই ফয়ছল আহমদ চৌধুরী ও ফাহিম আহমদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিয়ানীবাজার থানায় একটি জিডি করে এবং বাড়িতে দুই গাড়ি পুলিশ নিয়ে আসে। ঈদের দিন এই গরুগুলো জবাই করে তার ‘লাভদেশ’ সংস্থার নামে মাংস বিতরণ করে।
তিনি বলেন— ইয়াসমিন ভাড়াটিয়া শামীম আহমদকে জোরপূর্বক বাসা থেকে বের করে দিয়ে তালা মেরে দেয়। ভাড়াটিয়া সকল দোকানদারকে হুমকি-ধমকি দিয়ে ১১ লাখ টাকা করে তাদের কাছে চাঁদা দাবি করে এবং দোকানের মালামাল জোরপূর্বক নিয়ে যায়। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দোকানদাররা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন এবং থানায় জিডি করেন। এ সকল ঘটনায় আমরা আদালতে মামলা করলে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আদালত ১৪৫ ধারা জারি করলেও ইয়াসমিন তা মানছে না। ১৪৫ ভঙ্গ করে সম্প্রতি সে ৮টি দোকানের মধ্যে দুটি দোকানের তালা ভেঙে মালামাল লুট করে লাভদেশের সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন। এ ঘটনায় দোকানদার রফিক আলী মামলা দায়ের করেন। এ মামলার প্রেক্ষিতে ইয়াসমিনের সহযোগী রাহিনকে গ্রেফতার করা হলেও মালামাল উদ্ধার করা হয়নি।
এদিকে, দুলাভাইয়ের সংবাদ সম্মেলনের পর ওইদিন সন্ধ্যায় তার প্রতিক্রিয়ায় ইয়াসমীন চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন— সংবাদ সম্মেলনে এনামুল হক চৌধুরী এক তরফা মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। ওই ভূমি দখলে নিতে তিনি মিথ্যা কল্প কাহিনী সাজিয়েছেন।
তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন— আমাদের সম্পত্তিতে এনামুল হক কে? এখানে তিনি কেন কলকাঠি নাড়ছেন? আসলে এনামুল হক চৌধুরীও খেলার পুতুল। একটি ভূমিখেকো চক্রের সঙ্গে আঁতাত করে গোটা সম্পত্তি গ্রাস করতে এনামুল হক চৌধুরী ও ভূমিখেকো চক্রের সদস্যরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। আমার পৈতৃক সম্পত্তি রক্ষায় ওদের সঙ্গে একাই লড়াই করছি। যতদিন জীবন থাকবে ততদিন লড়াই করবো। তবুও আমার পিতার সম্পত্তি এনামুল হকরা পাবে না। সংবাদ সম্মেলন করে যে অভিযোগ করা হয়েছে; এর জবাব তিনি সংবাদ সম্মেলনেই দেবেন বলে জানান ইয়াসমীন চৌধুরী।
সৌজন্যে : মানবজমিন