দেড় যুগেও শেষ হয়নি কিবরিয়া হত্যা মামলার বিচারকাজ
সময় সিলেট ডেস্ক
সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের ১৮ বছর হয়ে গেলা। তবে দেড় যুগেও কিবরিয়া হত্যা মামলার বিচারকাজ শেষ হয়নি। নিয়মিত সাক্ষী হাজির না হওয়ায় বারবার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ পেছাচ্ছে। সরকারি কৌঁসুলিরা বলছেন— অনেক সাক্ষীর মারা যাওয়া, সাক্ষী হিসেবে থাকা সরকারি কর্মকর্তাদের অবসরে চলে যাওয়াসহ নানা কারণে সাক্ষীরা ধার্য তারিখে সাক্ষ্য দিতে না আসায় মামলার বিচারকাজ শেষ হচ্ছে না।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে একটি জনসভা শেষে বের হওয়ার পথে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন কিবরিয়া। চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় কিবরিয়ার ভাতিজা শাহ মঞ্জুরুল হুদা, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী নিহত হন। আহত হন আরও ৭০ জন। ঘটনার পরদিন হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা হয়।
এদিকে, এতো দিনেও মামলার বিচারকাজ শেষ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা।
নিহত ব্যক্তির ছেলে রেজা কিবরিয়া বলেন— ১৮ বছর অপেক্ষা করেছেন, আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করবেন। তার মা বিচারের দাবিতে ‘শান্তির সপক্ষে নীলিমা’ নামে একটা কর্মসূচি করতেন। প্রতি বৃহস্পতিবার তিনি রাস্তায় দাঁড়াতেন। শারীরিক দুর্বলতার কারণে এখন পারেন না।
তিনি বলেন— ‘আমার মায়ের মতো এভাবে কাউকে যেন রাস্তায় দাঁড়াতে না হয়, এটাই আমরা চাই। যারা আসল খুনি, তাদের যদি চিহ্নিত করতে পারি, তাহলে তাদের আপনজনদের রাস্তায় দাঁড়াতে হবে না।’
আদালত সূত্র জানায়— মামলা দুটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৫ সালে ১৮ মার্চ শহীদ জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল কাইউমসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এ অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করে বাদীপক্ষ। পরে মামলার পুনর্তদন্তের পর ২০১১ সালের ২০ জুন আসামির সংখ্যা ১৬ বাড়িয়ে ২৬ জনের নামে দ্বিতীয় দফা অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এটি নিয়েও আপত্তি জানায় নিহত ব্যক্তির পরিবার।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এতে নতুন করে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। পরে ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
সরকারি কৌঁসুলিরা বলছেন— একের পর এক তদন্ত এবং বাদীপক্ষের নারাজির কারণে মামলার বিচারকাজ শুরু হতে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। মূলত হত্যাকাণ্ডের সাড়ে ১০ বছর পর মামলার বিচার শুরু হয়। হত্যা মামলার ১৭১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আর বিস্ফোরক মামলায় ১৯১ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ১১ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। অনেক সাক্ষীর মারা যাওয়া, সাক্ষী হিসেবে থাকা সরকারি কর্মকর্তাদের অবসরে চলে যাওয়াসহ নানা কারণে সাক্ষীরা ধার্য তারিখে অনুপস্থিত থাকছেন। এ অবস্থায় সাক্ষীদের উপস্থিত করতে সমন জারিসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে।
আদালত সূত্র জানায়— সর্বশেষ ১৫ জানুয়ারি সাক্ষীরা আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ পেছানো হয়েছে। ওই দিন মো. শাহাদাত হোসেন প্রামাণিকের আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। মামলার পরবর্তী তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি ধার্য করেন আদালত। সর্বশেষ তারিখে উপস্থিত না হওয়া কয়েকজন সাক্ষীর নামে পরোয়ানা ও সমন জারি করেন আদালত। তবে ওই দিন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছসসহ কয়েকজন আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া মামলায় অভিযুক্ত জামিনে থাকা পাঁচজন আদালতে উপস্থিত হতে না পেরে সময় চেয়ে আবেদন করেছেন।
ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি সরোয়ার আহমদ চৌধুরী বলেন— ধার্য দিনে সাক্ষীরা হাজির না হওয়ায় নিষ্পত্তি হতে সময় লাগছে। তবে সাক্ষীদের হাজির করে দ্রুত মামলা শেষ করার চেষ্টা রয়েছে।
নিহত ব্যক্তির ছেলে রেজা কিবরিয়া বলেন— ‘হত্যাকাণ্ডের ১৮ বছরের মধ্যে ২ বছর বিএনপি, ২ বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও ১৪ বছর ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু কেউ বিচার করেনি। আমরা বারবার দুটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার দাবি জানিয়েছি, হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা কে এবং গ্রেনেডের উৎস কি? কিন্তু এ নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের আগ্রহ কম। আছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। এ জন্য বর্তমান সরকারের সময় হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার আশা করি না। তবে সরকার পরিবর্তন হলে আশা করি সুষ্ঠু বিচার হবে।’