বিধ্বস্ত তুরস্কে ফের ভূমিকম্প: পালাচ্ছে মানুষ, মৃত্যু ছাড়িয়েছে ৩৬ হাজার
আন্তর্জাতিক সময়
ভূমিকম্প বিধ্বস্ত তুরস্কের প্রত্যন্ত এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছেন মানুষ। কোন রকমে প্রাণ বাঁচিয়ে তারা নিরাপদ স্থানে যেতে চাইছেন। তাদের বিনামূল্যে বিমান পরিষেবা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে দেশের একাধিক বিমান সংস্থা।
টার্কিশ এয়ারলাইন্স, পেগাসাস এয়ারলাইন্স তুরস্কে দুর্গতদের জন্য বিনামূল্যে বিমান পরিষেবা ঘোষণা করেছে। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে বিনামূল্যে বিমান পৌঁছে দেবে দেশের রাজধানী আঙ্কারায়। অন্য নিরাপদ শহরগুলিতে আসার জন্যেও বিমান পরিষেবা মিলছে বিনামূল্যে।
ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকা থেকে দলে দলে চলে আসা দুর্গতদের জন্য তুরস্কের বিভিন্ন শহরে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল খুলে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও আশ্রয় নিচ্ছেন কেউ কেউ। হাতায়, নুরদাগি, মারাশের মতো এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ চলে আসছেন আঙ্কারা, ইস্তানবুলে, নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।
এদিকে, ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা ৩৬ হাজার ছাড়িয়েছে। এখনো অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। তবে সময় গড়ানোয় তাদের বেঁচে থাকার আশা কমছে। মৃতের সংখ্যা ধারণার চেয়ে অনেক বেশি হতে চলেছে বলে জাতিসঙ্ঘ সতর্ক করে দিয়েছে।
তুরস্কের জরুরি সমন্বয় কেন্দ্র এসএকেওএম জানিয়েছে— তুরস্কের ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ হাজার ৬৪৩ জন হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— তুরস্কের প্রতিবেশী সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৮১ জনে দাঁড়িয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ভূমিকেম্পের পর থেকে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি আহত প্রায় লাখের কাছে পৌঁছে গেছে। শুধু তুরস্কেই ছয় হাজারের ওপর ভবন ধসে পড়েছে। ভূমিকম্পের তাণ্ডব থেকে বেঁচে গিয়েও বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে মৃত্যুর প্রহর গুণছে। তবে সময় যত পেরোচ্ছে, ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে বেশি মানুষকে জীবিত উদ্ধারের আশাও ততই ফিকে হয়ে আসছে।
উদ্ধার অভিযানকালে কিছু অলৌকিক ঘটনাও ঘটছে। সিএনএন জানিয়েছে— তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আদিয়ামানে ভূমিকম্পের ১৭৮ ঘণ্টা পর একটি ছোট্ট মেয়েকে উদ্ধার করা হয়েছে। ছয় বছর বয়সী মেয়েটির নাম মিরায়। উদ্ধারকারীরা তার বড় বোনের কাছেও পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
এখন তুরস্ক এবং সিরিয়ার ৮ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষ খাদ্যাভাবে পড়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে— এই ভূমিকম্পের ফলে অন্তত ২ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ প্রভাবিত হয়েছেন।
গত সোমবার সকালে জোরালো ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক এবং সিরিয়ার মাটি। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৮। মূল কম্পনের পর আফটার শকে অন্তত ১০০ বার কেঁপেছে দুই দেশের মাটি। সোমবার তুরস্কের উদ্ধারকাজ পা দিয়েছে অষ্টম দিনে।
এদিকে, সোমবারের ভূমিকম্পের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের কম্পন তুরস্কে। রোববার রাতে ফের কেঁপে ওঠে বিপর্যস্ত তুরস্কের কাহরামানমারা এলাকা। ৪.৭ রিখটার স্কেলে কম্পনের পরে নতুন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফের কম্পনে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা আরও বেড়েছে।