সিসিক’র নির্মানাধীন খোলা ড্রেনে আবারো দুর্ঘটনা : সাংবাদিক আহত
সময় সংগ্রহ
দু’বছর আগে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ডে খোলা ড্রেনে পড়ে মারা যান কবি আব্দুল বাসিত মোহাম্মদ। তবে এতে হুশ ফিরেনি সিসিকের। কোন রকমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই চলছে সিসিকের উন্নয়ন কাজ। এবার এর শিকার হয়েছেন সাংবাদিক ও ব্যাংকার মতিউল বারি চৌধুরী।
গত সোমবার রাতে খোলা নালায় পড়ে যায় মতিউল বারিকে বহনকারী রিকশা। এতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয় তার।
মতিউল বারি জানান— সোমবার রাতে রিকশা নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। শিবগঞ্জ সেনপাড়ার রাস্তা কেটে করা ছোট নালায় রিকশার চাকা হঠাৎ আটকে গেলে ছিটকে পড়ে যান তিনি। এতে হাত, পিঠ এবং শরীরের অন্যান্য স্থানে জখম হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে সরজমিনে শিবগঞ্জ এলাকায় গেলে দেখা যায়— শিবগঞ্জ-খরাদিপাড়া রাস্তা থেকে সেনপাড়া রাস্তায় প্রবেশের পর প্রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ পর্যন্ত রাস্তার এখানে ওখানে এবড়ো থেবড়োভাবে রাখা কংক্রিট, বালু, ইট পাথরসহ আরও নানা ধরনের নির্মাণ সামগ্রী। রাস্তার দু’দিকেই খোলা ড্রেন যেনো মৃত্যুকে আহ্বান করছে। এরমধ্যে আবার এলোমেলোভাবে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখায় রাস্তাটি এতই সংকোচিত হয়েছে যে রিকশায় চলাচল করতেও প্রয়োজন পড়ে বাড়তি সতর্কতার। তবে বিদ্যুৎ চলে গেলে গোটা রাস্তাটাই ভয়ংকর রূপ ধারণ করে।
এলাকাবাসী জানান— ছোটোখাটো দুর্ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে। কাজ শুরু হয়েছে অনেক আগে। কিন্তু শেষ হওয়ার কোন নাম নেই। বারবার তাগাদা দিলেও কেউ কারও কথা শুনছেনা। বিশেষ করে যারা কাজ করছেন, সেই কন্ট্রাক্টর টিকাদারদের যেনো কোন দায়-দায়িত্বই নেই যেনো। তারা যত্রতত্র নির্মাণসামগ্রী ফেলে রেখে রাস্তাটিকে মরণফাঁদে পরিণত করেছেন। এমনকি, কোথাও কোন বিপদ সংকেত বা লাল নিশানাও কেউ দেয়ার প্রয়োজন মনে করেনা। তবে মতিউল বারি যে নালায় পড়েছিলেন, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর মঙ্গলবার সেই নালাটি ভরাট করেছেন করিতকর্মা কর্তারা। একটা লাল কাপড়ও সেখানে টানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও খেদ প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। আলী ওয়াসেকুজ্জামান চৌধুরী নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী গত ১০ ফেব্রুয়ারি লিখেছেন— ২০২০ সালে ড্রেন ও রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছিল আমাদের মহল্লায়। মাশা আল্লাহ, সিটি করপোরেশন সুন্দর তত্বাবধান করে ২০২৩ সালে এসেও রাস্তার কাজ প্রায় ২৫ ভাগের মত সম্পন্ন করতে পেরেছে। অবশ্য ড্রেন প্রায় শতভাগ। আমরা ভাঙ্গা রাস্তায় নানা কায়দা কানুন করে চলতে শিখেছি। আশা করি ২০২৫ সালের মধ্যে এই মহা পরিকল্পনা শেষ হবে। মোটামুটি পদ্মা সেতুর মত টাইমলাগা এই শিবগঞ্জ-দক্ষিণ বালুচর সড়কটির দৈর্ঘ্য ১.৫ কিলোমিটার।
এ ব্যাপারে কথা বলতে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মোবাইলে কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেন নি। রিসিভ করেন নি প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমানও।
এই সড়কের সংস্কার কাজের ঠিকাদার হিফজুল বলেন— এখানে কাজ হচ্ছে তিন পর্যায়ের। ড্রেন, রাস্তা সংস্কার ও এবং বিদ্যুৎ ও পানির লাইনের। আমি কেবল ড্রেনের কাজ করছি, তাও ঢাকার একজনের লাইসেন্সে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে।
খোঁজ নিযে জানা গেছে— কেবল সেনপাড়া রাস্তাই নয়, একই অবস্থা খরাদিপাড়া, মনিপুরিপাড়া, মজুমদারপাড়া, আদিত্যপাড়া, দেবপাড়াসহ গোটা শিবগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন পাড়ামহল্লার।
এদিকে, সাংবাদিক মতিউল বারি চৌধুরী আহতের খবর জানতে পেরে মঙ্গলবার সকালে সেনপাড়া রাস্তাটি পরিবদর্শন করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরাণ থানার এএসআই গফ্ফার। তিনি এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে জানান, ঘটনা সত্য। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে এবং তদন্তে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখার বিষয়টি প্রমাণ হলে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। আমরা আহত সাংবাদিকের বড় ভাই এবং স্থানীয়দের এ কথা জানিয়ে এসেছি।