কুলাউড়ায় মহিষ জবাই নিয়ে তুলকালাম!
কুলাউড়া সংবাদদাতা
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় নিজের পালিত মহিষ জবাই করে বাড়ি ফেরার পথে মহিষ মালিকসহ ১০ জন হতদরিদ্র পরিবারের লোককে আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ২১৬ কেজি মাংস জব্দ করা হলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে ১০৮ কেজি। এ ঘটনায় এলাকায় চলছে তুলকালাম কাণ্ড।
এদিকে সোমবার ২০ মার্চ কুলাউড়া প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন।
উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের বাসিন্দা মাসুক মিয়া (মহিষ মালিকের ভাই) অভিযোগ করে বলেন— তাদের পোষা মহিষ প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে কর্মধা ইউনিয়নের পাহাড়ে ছেড়ে দেন। প্রতি ১০-১৫ দিন পরপর কয়েকজন গিয়ে মহিষগুলো দেখে আসেন। আবার বর্ষাকাল আসলে সেগুলো নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসেন। গত ১৩ মার্চ বিকালে পাহাড়ে গিয়ে আপ্তাব আলী দেখতে পান, তাদের পোষা একটি মহিষ পাহাড় থেকে পড়ে পা ভেঙে মাটিতে শুয়ে আছে। এমতাবস্থায় আপ্তাব আলী লোকজন নিয়ে মহিষটি জবাই করে রাত ১০টার দিকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় উপজেলার জয়চণ্ডী ইউনিয়নের মেরিনা চা-বাগান এলাকায় আসলে কয়েকজন শ্রমিক তাদের গাড়ি আটকে রাখেন।
তিনি বলেন— তখন জয়চণ্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রব মাহাবুব ঘটনাস্থলে যান। এ সময় কর্মধা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেটসহ অন্যান্য কাগজপত্র দেখালেও জয়চণ্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তা না মেনে মহিষ মালিক আপ্তাব আলীসহ ১০ জনকে পুলিশে সোপর্দ করেন এবং জবাইকৃত মহিষের মাংস ওজন করে ২১৬ কেজি জব্দ করেন।
এ ঘটনায় পুলিশের এসআই আব্দুল আলীম বাদী হয়ে ১০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে পরদিন ১৪ মার্চ তাদের আটক দেখিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু মামলার এজাহারে জব্দকৃত মাংস ২১৬ কেজির স্থলে ১০৮ কেজি উল্লেখ করা হয়।
মাসুক মিয়া আরও অভিযোগ করেন— এরা যদি চোর হতো তাহলে আটকানোর সময় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করত। মেরিনা চা বাগানের ফ্যাক্টরির সামনে যখন মাংসগুলো ওজন (২১৬ কেজি) করা হয় তখন আমি সামনে ছিলাম। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পরে থানায় আসার পর মাংস কমে ১০৮ কেজি হলো কেমনে? বাকি ১০৮ কেজি মাংস গেল কোথায়? জবাইকৃত মহিষসহ পাহাড়ে আমাদের আরও ৮-১০টি মহিষ রয়েছে। পশু ক্রয়-বিক্রয় ও স্বত্বের কাগজপত্রও আমাদের আছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় বন বিভাগও অবগত আছে।
এ ব্যাপারে কর্মধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ জানান— আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, আপ্তাব আলীসহ যাদের আটক করা হয়েছে তারা মহিষের প্রকৃত মালিক। এরা কেউ চোর নয়, চুরির রেকর্ডও নেই। স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য হেলাল আহমদকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি এবং জয়চণ্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি, কিন্তু তিনি আমার কথা না রেখে সবাইকে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। এতে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা হয়েছে।
জয়চণ্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রব মাহাবুব জানান— স্থানীয় লোকজন আটক করে আমাকে জানালে আমি ঘটনাস্থলে যাই। মাংস কত কেজি হয়েছে বা কী হয়েছে- এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।
মামলার বাদী কুলাউড়া থানার এসআই মো. আব্দুল হালিম জানান— পাবলিক এদের আটক করেছে। ঘটনাস্থলে মেম্বার চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। পরের দিন মামলা রেকর্ড হয়। মহিষের কোনো মালিক পাওয়া যায়নি। এখন অন্য কথা বললে হবে না। আর মালিকানা কাগজ তারা বানাতেও পারে।