ভারত থেকে ভ্যাকসিন আমদানীতে অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশ
স্টাফ রিপোর্টার :
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন- ‘ভারতে ভ্যাকসিন রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা শুনেছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমরা যোগাযোগ করছি। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও কথা বলেছি। আশা করছি সিরামের সঙ্গে চুক্তি ব্যাহত হবে না। চুক্তি অনুযায়ী আমরা ভ্যাকসিন পাবো। তিনি বলেন, ‘এ এটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি। আশা করছি ভারত চুক্তির প্রতি সম্মান দেখাবে।’
এর ‘আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন জানুয়ারির মধ্যে আমরা সিরামের টিকা পাবো, এখন কবে পাওয়া যেতে পারে’- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- ‘এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। নিশ্চিত হলে বলতে পারবো। এ সমস্যাটি নতুন করে তৈরি হয়েছে। গতকালও আমরা নিশ্চিত ছিলাম টিকা পাবো। আজ শুনলাম ভারত সরকার টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে’।
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী জানান- ভারতকে ভ্যাকসিন দেওয়া বাবদ টাকা পাঠানোর সব কাজ শেষ। আজ মঙ্গলবার চুক্তি অনুযায়ী অর্ধেক টাকা অর্থাৎ ৬শ কোটি টাকা পাঠানো হবে।
‘পেঁয়াজ নিয়ে ভারত আমাদের যেভাবে নাজেহাল করেছে, টিকা নিয়ে আমরা ভারতের ওপর কীভাবে বিশ্বাস রাখতে পারি’- এক সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন- ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গভীর। কাজেই আমরা ভারতের ওপর বিশ্বাস রাখতে চাই।’
‘এককভাবে ভারতের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হওয়ার খেসারত আমরা দিচ্ছি কিনা’- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- ‘তারপরও আমরা বিশ্বাস রাখতে চাই। এছাড়াও অন্যান্য দেশের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে।’
ভারতে সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনকার করোনা ভ্যাকসিন রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দেশটির সরকার। রোববার (৩ জানুয়ারি) এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সিরাম ইনস্টিটিউটের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এপি। রোববার সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদর পুনাওয়ালা এপিকে বলেন- কয়েক মাসের জন্য ভ্যাকসিন রফতানির অনুমতি দেবে না ভারত। ভারতীয়রা যাতে যথাযথভাবে ভ্যাকসিন পায় সেজন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, গতকাল সোমবার সেরাম ইনস্টিটিউটের জনসংযোগ কর্মকর্তা মায়াঙ্ক সেন দিল্লিতে বিবিসির ইয়োগিতা লিমায়িকে জানিয়েছেন- টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞার যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা পুরোপুরি সঠিক নয়। কারণ, তাদের টিকা রফতানির ওপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে কোম্পানিটি এখন অন্য দেশে টিকা রফতানির অনুমতি পাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, যা পেতে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। তবে রফতানি শুরুর আগেই তারা ভারত সরকারকে ১০ কোটি টিকা দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে তারা সেটা করতে পারবে না, যেহেতু তাদের রফতানির অনুমতি নেই।
এদিকে, সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ভ্যাকসিন পাবার বিষয়ে কোনও অনিশ্চয়তা নেই। আমরা সময় মতো, চুক্তির নির্ধারিত সময়েই করোনার ভ্যাকসিন পাবো বলে জানিয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তি করা ভ্যাকসিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড।
সোমবার (৪ জানুয়ারি) বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা এ তথ্য জানান। তিনি বলেন- ‘আমরা আশা করছি, আমাদের অ্যাগ্রিমেন্টে যেভাবে বলা আছে, অ্যাগ্রিমেন্ট অনুযায়ী ভ্যাকসিন পাবো।’
তাদের (সেরাম ইনস্টিটিউট) সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। আজও সেরামের সঙ্গে কথা বলেছি। অ্যাগ্রিমেন্টে যেসব ক্লজ রয়েছে, সেভাবে ভ্যাকসিন আসার কথা। সেভাবেই আমরা ভ্যাকসিন পাবো। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে।’
কিন্তু ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার পর সেটা কীভাবে পাওয়া যাবে জানতে চাইলে রাব্বুর রেজা বলেন- ‘ওদের ( সেরাম ইনস্টিটিউট) কাছে ইতোমধ্যে ৭০টি দেশ থেকে ভ্যাকসিনের জন্য রিকোয়েস্ট রয়েছে। কিন্তু তারা দেশকে প্রায়োরিটি দিতে চাচ্ছে। অনেক দেশের অনেক বেশি অর্ডার রয়েছে। কোভ্যাক্সেরও রয়েছে অর্ডার। কিন্তু সে তুলনায় আমাদের অর্ডার অনেক কম। তারা বানাবে দুই বিলিয়নের মতো। আমাদের দরকার ৩০ মিলিয়ন। সে হিসাবে এটা তাদের কাছে কিছুই না।’