মৌলভীবাজারে ঈদের বাজারে বিক্রি কমেছে ৭০ শতাংশ
সময় সংগ্রহ :
চলমান লকডাউনে শর্তসাপেক্ষে দোকানপাট খোলা রাখলেও এই বছর ঈদ মৌসুমে অন্যান্য স্বাভাবিক বছর থেকে মৌলভীবাজারে বিক্রি কমেছে ৭০ শতাংশ। স্বাস্থ্যবিধি, লকডাউনে আয় না কমে যাওয়া এবং প্রবাস থেকে বিশেষ করে বিলেত থেকে ঈদের বাজারের জন্য আগের মত টাকা না আসাকেই এই বিক্রি কমে যাওয়ার জন্য দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রমজানের ঈদ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির মৌসুম। সারা বছর এই ঈদকে ঘিরে তাদের পরিকল্পনা থাকে। কিন্তু পরপর দুই বছর করোনা ভাইরাসের কারণে বিক্রি কমেছে। সেই সাথে তারা যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তা কাটাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও কয়েক বছর লাগব। স্বাভাবিক বছরগুলোতে রমজানের শেষ ১০ দিন দিন রাত গ্রাহকদের উপছেপড়া ভিড় থাকে।
তার উপর যুক্তরাজ্যে থাকা প্রবাসীরা ঈদের সময় দেশে আসেন এবং যারা আসতে পারেন না তারা স্বজনদের জন্য ঈদের কেনাকাটার জন্য বড় অংকের টাকা পাঠান। কিন্তু চলতি বছরে সারা বিশ্বজুড়ে করোনার আক্রমণ থাকায় প্রবাসেও আয় কমে যাওয়ায় তারা টাকা পাঠাতে পারছেন না অন্যদিকে যাতায়াত সীমিত থাকায় তারা আসছেন না বা আসতে চাইছেন না।
ব্যবসায়ীরা জানান- একজন যুক্তরাজ্য ফেরত প্রবাসী ঈদের সময় যে কেনাকাটা করেন তা দেশে থাকা ২০/৩০ জন গ্রাহকের সমান। অনেকে একাই শত মানুষের জন্য উপহার কেনেন। কিন্তু এই বছর তার উল্টো। ঈদের বাজার শেষ পথে চলে আসলে মার্কেটগুলোতে নেই তেমন বিক্রির হার।
শহরের বিলাস ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের পরিচালক সুমন আহমদ জানান- এই বছর বিক্রি কমেছে ৭০ শতাংশ। স্বাভাবিক বছরগুলোতে এই সময়ে গ্রাহকদের যে চাপ থাকে তা সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। রাত দিন সমান তালে বিক্রি চলে কিন্তু এই বছরের ঈদে বাজারে মানুষের চাপ নেই। শুধু করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানার কারণে এমন হচ্ছে তা নয়। স্বাভাবিক সময়ে যে গ্রাহক লক্ষাধিক টাকার কেনা কাটা করতেন তিনি এখন ১০/১৫ হাজারেই কেনাকাটা সারছেন। মানুষের হাতে টাকা কমে গেছে যার কারণে বিক্রি কমেছে। তার উপর দোকান বন্ধ করার যে সময় সরকার ঠিক করে দিয়েছে সেটা রমজান মাসের জন্য ঠিক হয়নি। কারণ ইফতার করে নাম পরে একটু রেস্ট নিতে নিতেই রাত ৮টা হয়ে যায়।
অন্যদিকে মৌলভীবাজার শহরের জনপ্রিয় এম বি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের পরিচালক নুরুল ইসলাম কামরান জানান- একে তো লন্ডন প্রবাসীরা দেশে আসেননি, আবার করোনার কারণে তারা আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যার কারণে দেশে টাকা পাঠাতে পারেননি। এর প্রভাব পড়েছে ঈদের বাজারে। মৌলভীবাজারের মানুষদের একটি বড় অংশ ঈদের কেনাকাটা করেন বিলেত থেকে পাঠানো থাকায়। এই বছর আমাদের বিক্রি ৫০ শতাংশ কমেগেছে। লন্ডনের অবস্থা স্বাভাবিক না হলে মৌলভীবাজারের মানুষের হাতে টাকা থাকবে এটাই স্বাভাবিক ।
বড় ব্যবসায়ীদের মত একই অবস্থা ছোট ব্যবসায়ীদের। মৌলভীবাজার শহরের পশ্চিম বাজার এলাকার একটি গলিতে ছোট্র কাপড়ের দোকান আব্দুল মতলিবের। কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান- আমার এই ছোট দোকান থেকেই ২০ রমজানের পর থেকে ৩৫/৪০ হাজার টাকা বিক্রি হত কিন্তু গত বছর এবং এই বছরে করোনার কারণে সেটা কমেছে ৮০ শতাংশ।
এ দিকে শহরের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে- যুক্তরাজ্য ফেরত গ্রাহকদের দেখা নেই তবে মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসকারী প্রবাসীদের অনেক পরিবার এই বছর কেনাকাটায় আসছেন।
জেলার রাজনগর উপজেলার তৈয়বা বেগমের স্বামী থাকেন দুবাই। তিনি দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে আসছেন। তিনি জানান- করোনার কারণে গত বছর ঈদে সন্তানদের জন্য কিছু কিনে দিতে পারিনি কিন্তু এই বছর মনে মানছেনা তাই কিছু কেনাকাটা করতে আসছি তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার চেষ্টা করছি।
মৌলভীবাজার বিজনেস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন জানান- আমরা যে খবর পাচ্ছি তাতে দোকান ও মার্কেট বিশেষে বিক্রি কমেছে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ। গড়ে ৭০ শতাংশ বিক্রি কমেছে। এই অবস্থা থেকে খুব দ্রুত মুক্তি মিলবে বলে মনে হচ্ছেনা। কারণ করোনা চলে গেলেও আগামী ২/৩ বছর এই রেষ থাকবে। তবে যত দ্রুত এই অবস্থার পরিবর্তন হবে ততই আমাদের জন্য ভাল।
মৌলভীবাজার চেম্বার এন্ড কমার্সের সাবেক সভাপতি ডা. আব্দুল আহাদ জানান- প্রবাসীদের অর্থ হচ্ছে মৌলভীবাজারের কেনাকাটার চালিকা শক্তি। সেই অর্থ আসা দিন দিন এমনিতেই অনেকটা কমেছে তার উপর করোনার এই প্রভাবে একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে। বিক্রি কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের উপর চাপ বাড়ছে কারণ ঘর ভাড়া, বিভিন্ন বিল, কর্মচারীদের বেতন দিতে অনেকেই মূলধন থেকে খরচ করছেন।