সিলেটে সাতদফা ভূমিকম্প : সম্ভাব্য বিপর্যয় ঠেকাতে মাঠে মেয়র, ৭ মার্কেট বন্ধ
সময় সিলেট ডেস্ক :
একদিনে সাতদফা ভূমিকম্প পরবর্তী সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে আটঘাট বেধে মাঠে নেমেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। এ অবস্থায় নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ বেশকিছু ভবন ও মার্কেট আগামী ১০ দিনের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবন দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপসারণের উদ্যোগ নিচ্ছে নগর কর্তৃপক্ষ।
এরই অংশ হিসেবে সিলেট নগরীর মিতালি ম্যানশন, সিটি সুপার মার্কেট, মধুবন সুপার মার্কেট, রাজা ম্যানশন, সমবায় ভবন ও সুরমা মার্কেট ১০ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন।
এছাড়া অতিঝুঁকিতে থাকা জিন্দাবাজারের একটি দোকান স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। পাশাপাশি নগরীর পনিটুলা এলাকায় সামান্য হেলে থাকা ভবনের বাসিন্দাদেরও ১০ দিনের জন্য অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।
ঘন ঘন ভূমিকম্প পরবর্তী সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলা এবং মানুষের জান-মাল রক্ষার স্বার্থে নগর কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে রোববার (৩০ মে) বিকেলে এ জরুরি নির্দেশনা দেয়।
এদিকে ৬টি ভবন (মার্কেট) ও একটি দোকান আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় ছিল বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন। শনিবার ৬ বার ও রোববার ভোরে আরও একবার ভূকম্পনের পর সিলেটে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলো পরিদর্শন করে ব্যবসায়ীদের আগামী ১০ দিন মার্কেট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানান সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
এ সময় তিনি জানান- সিলেট নগরীতে দফায় দফায় ভূমিকম্পের কারণে সিলেটে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এসব ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ সকল মার্কেট অন্তত ১০ দিন বন্ধ রাখতে হবে।
তিনি সাংবাদিকদের জানান- সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারস্থ মিতালী ম্যানশন, রাজা ম্যানশন ও বন্দরবাজারের সিটি সুপার এবং মধুবন সুপার মার্কেট, সমবায় ভবন ও সুরমা মার্কেট আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে চিহ্নিত। এভাবে সিলেট নগরীর সকল ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ও ভবনের কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্টদের আগামী ১০ দিন বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হবে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ বাসাবাড়ির বাসিন্দাদেরও আগামী ১০ দিন অন্যত্র থাকতে হবে।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন- সিসিক কাউন্সিলর মো. ইলিয়াছুর রহমান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আসলাম উদ্দিন, প্রধান প্রকৌশলী মো. নূর আজিজুর রহমান, সিলেট গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিপন কুমার রায়, এসএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. আজবাহার আলী, সিসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আব্দুল আজিজ, ভারপ্রাপ্ত রাজস্ব কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসমীন নাহার রুমা, জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেজবাহ উদ্দিন, ফায়ার সার্ভিস সিলেটের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান’সহ বিভিন্ন দপ্তর ও বিভাগের প্রতিনিধিগণ।
এর আগে ২০০৫ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা নগরীর ৩৫টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। পরে সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি ভবন ভেঙে দেয়া হয়। এরপর ২০১৯ সালে নতুন করে সার্ভে করে নগরীর ২৩টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
এদিকে সিলেটে ২৪ ঘন্টায় সাত দফা ভূমিকম্পের মাঝেই নতুন আতংক ছড়ায় ৬ তলা ভবন হেলে পড়ার খবর। পরে, নগরীর পনিটুলায় ওই ছয়তলা ভবন পরিদর্শনে অবকাঠামোগত কিছু ত্রুটি পেলেও ভবনটি ততোটা ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গণপূর্ত বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী রিপন কুমার রায় জানান- বিল্ডিংটিতে অবকাঠামোগত কিছুটা ত্রুটি ধরা পড়েছে। ভবনটি ততোটা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কারণ, বিল্ডিংটি হেলে পড়লে ফাটল থাকতো, লিফট ওটানামায় সমস্যা হতো। সেরকম কিছুই সেখানে পরিলক্ষিত হয়নি। তবে অবকাঠামোগত ত্রুটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র আরিফ। এছাড়া ভূমিকম্প পরবর্তী সম্ভাব্য দুর্যোগ এড়াতে তিনি ওই বিল্ডিংএর বাসিন্দাদের ১০ দিনের জন্য অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে ভূমিকম্প পরবর্তী দুর্যোগের বিষয়টি মাথায় রেখে শিগগিরই তালিকাভুক্ত অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান।
প্রসঙ্গত, সিলেটে গত শনিবার ও রোববার ভোররাতে কয়েকদফা ভূমিকম্পের পর পরই নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযানে নামে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। ইতোমধ্যে নগরীতে এরকম ২২টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে সার্ভে করে নগরীর ২৩টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।