সিলেটে ছড়িয়েছে ভারতীয় ধরন : শনাক্ত বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি
স্টাফ রিপোর্টার :
মহামারি করোনায় বিপর্যস্ত সিলেট বিভাগ। প্রতিদিন বাড়ছে শনাক্তের সংখ্যা। গত এক সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্ত বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। গত ২১ জুন বিভাগে নমুনা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। আর এক সপ্তাহ পর ২৭ জুন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে- গত এক সপ্তাহে সিলেট বিভাগে ৯৭০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সারাদেশের মতো সিলেটেও ভারতীয় ধরন (ডেল্টা) ছড়িয়ে পড়ায় সংক্রমণের এত উর্ধ্বগতি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে- গত রোববার (২৭ জুন) সিলেট বিভাগে ৭৬১টি নমুনা পরীক্ষায় ২৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৭৪। এ দিন সিলেট জেলায় ৫৯২টি নমুনা পরীক্ষায় ১৫৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ৮৪। সুনামগঞ্জে ৩০টি নমুনা পরীক্ষায় নয় জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩০। হবিগঞ্জে ৬৫ নমুনা পরীক্ষায় ২৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ৪৬। বিভাগের মধ্যে নাজুক অবস্থায় রয়েছে মৌলভীবাজার জেলা। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় শনাক্তের হার ৬৩ দশমিক ৫১। ৭৪টি নমুনা পরীক্ষায় এই জেলায় শনাক্ত হয়েছেন ৪৭ জন রোগী।
এর আগে গত ২৬ জুন বিভাগে ৬০৯টি নমুনায় ৯৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ২৫। এ দিন সিলেট জেলায় ৫১৩ নমুনায় ৭৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ছিল ১৪ দশমিক ৬১। সুনামগঞ্জে ৪২ নমুনায় নয় জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৪২। হবিগঞ্জ জেলায় ১৯টি নমুনা পরীক্ষায় ৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৪২ দশমিক ১০। মৌলভীবাজার জেলায় ৩৫টি নমুনা পরীক্ষায় ৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০।
গত ২৫ জুন ২৪ ঘণ্টায় ৭৬৫টি নমুনা পরীক্ষায় ১২২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৯৪। এ দিন সিলেট জেলায় ৫০৫টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ছিল ১২ দশমিক ৬৭। সুনামগঞ্জে ৫৩টি নমুনা পরীক্ষায় ১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৮৬। হবিগঞ্জে ৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় সাত জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ২১। মৌলভীবাজার জেলায় ১৬১টি নমুনা পরীক্ষায় ৪১ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ৪৬।
এর আগে ২৪ জুন ১৫৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬২৬টি। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ৭৬। এ দিন সিলেট জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১০৬ জনের। নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪৩৯টি। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ১৪। সুনামগঞ্জে ২৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৮৩। হবিগঞ্জে ৭০টি নমুনা পরীক্ষায় ৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। জেলায় শনাক্তের হার ১১ দশমিক ৪২। মৌলভীবাজার জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৬ জনের করোনা শনাক্তে হয়েছে। জেলায় শনাক্তের হার বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৯ শতাংশ।
গত ২৩ জুন বিভাগের চার জেলার ৫৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ১২৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২১। এ দিন সিলেট জেলায় ৩৯৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৭৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১৮ দশমিক ৮৯। সুনামগঞ্জে ৩৮টি নমুনা পরীক্ষায় ১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৫০। হবিগঞ্জে এ দিন ৪১টি নমুনা পরীক্ষায় ১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৯। মৌলভীবাজার জেলায় ১১৮টি নমুনা পরীক্ষায় এ দিন ১৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১২ দশমিক ৭১।
গত ২২ জুন বিভাগের চার জেলার ৫৪৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ১২২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ২৬। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৪১৮টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয় ৯০ জনের। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৫৩। সুনামগঞ্জে ৩৪টি নমুনা পরীক্ষায় তিন জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৮২। হবিগঞ্জে ৪৮টি নমুনা পরীক্ষায় ১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৮৩। মৌলভীবাজার জেলার ৪৮টি নমুনা পরীক্ষায় এ দিন ১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ছিল ৩৯ দশমিক ৫৮।
আর গত ২১ জুন ৬৪৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৪১। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৪৯৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৮৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৭০। সুনামগঞ্জে ৪১টি নমুনা পরীক্ষায় ৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ১৭। হবিগঞ্জে ৪০টি নমুনা পরীক্ষায় পাঁচ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ১২ দশমিক পাঁচ শতাংশ। মৌলভীবাজারে ৭১টি নমুনা পরীক্ষায় ১৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ২৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
গত বছরের ৫ এপ্রিল সিলেটে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ওই বছরের মে-জুনে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। তবে আগস্টের পর কমতে থাকে সংক্রমণ। এ বছরের প্রথম দুই মাস করোনা সংক্রমণ ছিল নিয়ন্ত্রণে। তবে মার্চের পর থেকে আবার শনাক্ত বাড়তে থাকে। এপ্রিলের শেষ দিকে চলাচলে বিধি-নিষেধের কারণে আবার সংক্রমণ কমতে শুরু করে। তবে গত ঈদের পর থেকে আবারও সংক্রমণ কিছুটা বাড়তে থাকে। গত এক সপ্তাহ ধরে এই সংক্রমণের হার আরও বেশি উর্ধ্বগামী। এ অবস্থায় সিলেট বিভাগের চার জেলাকেই অতি উচ্চ সংক্রমিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন- কোনো এলাকায় শনাক্তের হার ১০ শতাংশের বেশি হলে তাকে উচ্চ সংক্রমিত এলাকা হিসেবে ধরা হয়। সেখানে সিলেট বিভাগে শনাক্তের প্রায় তিনগুণ বেশি। সিলেটে ভারতীয় ধরন (ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট) ছড়িয়ে পড়ার কারণেই একসঙ্গে এত মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে বলে তারা মনে করছেন।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন- ‘সংক্রমণের এই উর্ধ্বমুখী হার আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগজনক। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার কারণে সংক্রমণ এত বাড়ছে। এবার পরিবারের কেউ একজন আক্রান্ত হলে বাকিরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। কারণ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অনেক বেশি সংক্রামক।’
তিনি বলেন- ‘লকডাউনের ঘোষণা আগে থেকে দেওয়ায় অনেকে গাদাগাদি করে বাড়ি ফিরেছেন। অন্যান্য জেলা থেকেও অনেকে সিলেটে এসেছেন। এতে করে সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কারফিউ বা শাটডাউন দিতে হবে। যাতে কেউ বাড়ি থেকে বের হতে না পারেন। তা না হলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।’