কঠোর লকডাউনে ভালো নেই নবীগঞ্জের নিম্ন আয়ের মানুষ
হবিগঞ্জ সংবাদদাতা :
মো. তানভীর হোসেন, হবিগঞ্জ থেকে : ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় বাড়তি চাপ পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষের উপর। তার ওপর সামনে কোরবানির ঈদ। ইতিমধ্যে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে এসেছেন বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত উপজেলার স্বল্প আয়ের মানুষজন। এতে ভয়াবহ করোনা সংক্রমণের পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থান না হলে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কেউ চালাচ্ছে রিক্সা, কেউবা আবার দৈনিক চুক্তি ভিত্তিতে কাজ করে সংসারের অভাব অনটন দূর করতে কাজ করলেও এখন আর তেমন কাজও নেই। করোনা আতঙ্কিত চারদিকে শুধুই শুন্যতা। এদিকে, পরিবহণ শ্রমিকরা কঠোর লকডাউনের ফলে কর্মহীন অলস সময় পার করছে। ফলে সংসারের অভাব-অনটনে অর্ধহারে-অনাহারে জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের।
কর্মহীন হয়ে পড়া এসব মানুষের সঞ্চয় ইতিমধ্যে ফুরিয়ে এসেছে। এতে অর্থনৈতিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সমাজের নানা স্তরে। মানুষের মনে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে, ভর করছে এক অজানা শঙ্কা। তার ওপর কর্ম হারিয়ে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী গ্রামে যুক্ত হওয়ায় পড়ছে কাজের আকাল। অভাব-অনটনে পড়ে অনেকেই জীবিকার তাগিদে অসৎ পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
নবীগঞ্জ শহরের চায়ের দোকানদার কাসেম মিয়া বলেন- কঠোর লকডাউনের কারণে দোকান বন্ধ রেখেছি। ছয়জনের সংসার চা বিক্রি করে আমার সংসার চলে। আয় বন্ধ থাকলে সংসার চলবে কি করে। গত লকডাউনের সময়ও দোকান বন্ধ ছিল। তখন জমানো টাকা ভেঙে সংসার চালিয়েছি। এখন ঘরে টাকা নেই। দিনের পর দিন দোকান বন্ধ থাকলে তো না খেয়ে মরতে হবে। সরকারের সাহায্য ছাড়া বেঁচে থাকা দুরুহ হবে।
কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান- প্রতিদিন ব্যবসা করে যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার চলতো। কিন্তু বর্তমানে মানুষের সমাগম বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের নির্দেশে দোকান বন্ধ। এখন আমরা গরীব মানুষ কোথায় যাব। এভাবে চলতে তাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।
সরেজমিনে রিকশা চালক রাজু সরকার সাথে আলাপ হয়। লকডাউন এ রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন কেন বলতেই তিনি বললেন- ভাই পেটের জ্বালায় ঘরে থাকা যায় না। আমরা সাধারন মানুষ, আমরার খবর রাখে কে? পেটের দায়ে রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। সকাল থেকে রিকশা নিয়ে ঘুরছি, রাস্তায় যাত্রী না থাকায় আয় রোজগার নেই বললেই চলে। এ সময় তিনি আরোও বলেন- করোনা নয়, সরকার সাহায্য না করলে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।
এদিকে, কঠোর লকডাউনে কাজ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন উপজেলার অভ্যন্তরীণ রুটে চালাচলকারী বাসের হাজার ও শ্রমিক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাস শ্রমিকরা জানান- অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চালিয়ে তারা যা আয় করেন তা দিয়ে তাদের কোন রকমে সংসার চলে। এখন লকডাউনে খুব সমস্যার মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে। কাজ না থাকায় পরিবার পরিজনদের নিয়ে না খেয়ে কষ্টের দিন কাটাচ্ছেন তারা।
নাজমুল ইসলাম বলেন- গত বছরের লকডাউনের শুরুতেই সরকারের পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সেচ্ছাসেবী সংগঠন দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষদের নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছিল। কিন্তু এবারের কঠোর লকডাউনে ওইসব প্রতিষ্ঠান আর এগিয়ে আসছে না। সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে ভালো নেই নিম্ন আয়ের মানুষেরা। কঠোর লকডাউনে তাদের আয় একেবারে কমে গেছে। পরিবার চালানোর ন্যূনতম খরচটুকুও যোগাতে পারছেন না।