সিরাজগঞ্জে চৌকি-মাচায় রাঁধে খায় : সেখানেই তারা ঘুমায়
স্টাফ রিপোর্টার
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম ও আরকান্দি গ্রাম বন্যায় ডুবে আছে। গ্রামের শতাধিক নারী ও শিশু বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া বাড়িঘরের মধ্যে চৌকি উঁচু করে অথবা মাচা পেতে বসবাস করছে। গত ১ সপ্তাহ ধরে সেখানেই তারা রাঁধে খায়, সেখানেই তারা ঘুমায়।
বুধবার দুপুরে ওই দুই গ্রাম ঘুরে দেখা যায় তাদের এই মানবেতর জীবনযাপন। বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া শতাধিক বাড়িঘরের নারী পুরুষ ও শিশু চৌকি ও মাচায় নীরব বসে দিন পার করছে। তাদের চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ।
অনেকে দুপুরে খেয়েছে, আবার অনেকে খায়নি। অনেক শিশু খাবারের জন্য কান্নাকাটি করছে। বাড়ির উঠানে কোমর পানি। টিউবওয়েলও ডুবে গেছে। একদিকে ঘরে খাবার নাই। অন্যদিকে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব।
বন্যার পানিতে টয়লেট ডুবে যাওয়ায় প্রাত কাজ সারছে খোলা স্থানে অথবা বন্যার পানিতে। এতে ওই এলাকায় নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মানুষজন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণগ্রামের আব্দুল বারেক শেখ বলেন- আমি একজন মুদি দোকানদার। বাড়িঘরের সঙ্গে আমার মুদি দোকানটিও বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। তাই বেচাকেনা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম অর্থ কষ্টে পড়েছি। অর্থাভাবে বাজারহাট করতে পারছি না। তাই দুই-এক বেলা খাই আবার অনেক সময় না খেয়েও কাটাই।
পেশায় দিনমজুর তারিফ উল্লাহ জানান- অন্যের জমিতে কাজ করে জীবিকা চালান তিনি। বন্যার পানিতে মাঠঘাট ডুবে যাওয়ায় হাতে কাজ নেই। ফলে তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
ওই এলাকা ঘুরে বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া বাড়িঘরের শতাধিক মানুষের এ করুণ অবস্থা দেখা গেছে।
খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম মাঠপাড়ার বাসিন্দা পিঞ্জিরা বেগম, ফাতেমা বেগম, ছকিনা খাতুন, হযরত আলী, খাদিজা বেগম, আজিত শেখ, দুলাল হোসেন, আল্লেক চান, আব্দুর রাজ্জাক, শহীদ আলী, ইয়ামিন ও সোহান জানান- বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ১ সপ্তাহ ধরে তাদের বাড়িঘর কোমর পানিতে ডুবে গেছে। অন্যত্র যাওয়ার উপায় না থাকায় তারা ডুবে যাওয়া ঘরের মধ্যে চৌকি উঁচু করে ও মাচা তৈরি করে বসবাস করছেন। সাহায্য সহযোগিতা তো দূরের কথা, এ পর্যন্ত তাদের কেউ কোনো খোঁজখবর নেয়নি। ফলে তারা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিশেষ করে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে তারা অত্যন্ত ঝুঁকি ও কষ্টের মধ্যে আছেন। এরা কখন পানিতে পড়ে যায়, এ আশঙ্কায় রাত জেগে পাহারা দিতে হয়। তারা তাদের জীবনের নিরাপত্তা ও খাদ্য সাহায্যের দাবি জানান।
এছাড়া উপজেলার পৌর এলাকাসহ ১৩টি ইউনিয়নের অধিকাংশ নিচু জমি ও বাড়িঘর বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। মাঠঘাট বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় জমিতে কাজ করা দিনমজুরেরা বেকার হয়ে পড়েছেন। কাঁচা ঘাসের অভাবে বাথান এলাকার কৃষকেরা তাদের গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। অপরদিকে খইল ভুষি ও প্যাকেটজাত গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ফলে অনেক কৃষক পালের গরু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে।
এ বিষয়ে খুকনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুল্লুকচান বলেন- আমি সরেজমিন ওই এলাকা পরিদর্শন করে বন্যাদুর্গতদের জন্য সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. শামসুজ্জোহা বলেন- ওই এলাকার বন্যা কবলিতদের মধ্যে যারা খাদ্যাভাবে পড়েছেন তারা ৯৯৯ নম্বরে কল করলে তাদের ঘরে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া হবে। তিনি বন্যাদুর্গতদের খাদ্য সহায়তা চেয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করার পরামর্শ দেন।