অর্থ ছাড়ের পরও আটকে আছে কিনব্রীজের সংস্কার কাজ
সময় সিলেট ডেস্ক
প্রায় ৪৩ বছর পর সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিনব্রীজ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন এই সেতুর সংস্কার কাজ করবে রেলওয়ে বিভাগ। এজন্য অর্থ বরাদ্দ হয়ে গেলেও নানা কারণে আটকে আছে সংস্কার কাজ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এই সেতু সংস্কারের জন্য গত জুনে রেলওয়ে বিভাগকে দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। তবে টেন্ডার না হওয়া ও নদীতে পানি বেশি থাকার কারণে ব্রীজের মূল সংস্কার কাজ রেলওয়ে দুমাস পরে শুরু করবে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্রীজটি ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে প্রথমদফা সংস্কার করেছিল। সংস্কারকাজ শুরু হলে এটিই হবে মুক্তিযুদ্ধের পর রেলওয়ের মাধ্যমে কিনব্রীজের দ্বিতীয়দফা সংস্কার।
ব্রিটিশ আমলে লোহার কাঠামোয় ব্রীজটি দৃষ্টিনন্দন ধনুক আকৃতিতে নির্মাণ করেছিল রেলওয়ে বিভাগ। একটানা দুই বছর নির্মাণকাজ শেষে ১৯৩৬ সালে ব্রীজটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন আসাম প্রদেশের গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এই সেতুর নামকরণ হয় ‘কিনব্রীজ’। আট দশকের বেশি সময় ধরে সচল ব্রীজটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং সিলেট অঞ্চলে সুরমা নদীর ওপর প্রথম ব্রীজ। দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৫০ ফুট এবং প্রস্থ ১৮ ফুট।
কিনব্রীজটির মূল কর্তৃপক্ষ সড়ক ও জনপথ বিভাগ। দেখভাল করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর ব্রীজটি নড়বড়ে হয়ে পড়লে দুই দিকে লোহার বেষ্টনী দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে প্রয়োজনীয় সংস্কার করেছিল সিটি করপোরেশন। এ জন্য যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল ৫২ দিন।
সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়- সর্বশেষ সংস্কারকাজ শেষে কিনব্রীজকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ফুটওভার ব্রীজে (পদচারী-সেতু) রূপান্তর করার জন্য একটি প্রস্তাব ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সওজকে দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি কিনব্রীজটি আবার যান চলাচলের ঝুঁকির মুখে পড়ায় গত ২৯ জুলাই ভারী যান চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে ব্রীজের প্রবেশ মুখে সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন- তৃতীয় দফা সংস্কারের দুই বছরের মাথায় ভারী যানবাহন চলাচলে ফের ঝুঁকি দেখা দেওয়ায় রিকশা-ভ্যান-মোটরসাইকেল ছাড়া বাকি সব ধরনের যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে।
সওজের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানিয়েছে- কিনব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছিল রেলওয়ের মাধ্যমে। লোহার কাঠামোর কাজ রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ যথাযথভাবে করে বলে কিনব্রীজটি সংস্কার ও কিছু মেরামতকাজের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গত জুন মাসে এ কাজের জন্য সওজ থেকে প্রায় ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়েছে জানিয়ে সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন- কিনব্রীজটি নির্মাণ করা হয়েছিল রেলওয়ের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও রেল কর্তৃপক্ষ সংস্কার করেছে। ব্রীজটির কাঠামো যাতে যথাযথ থাকে, এ জন্য রেলকেই সংস্কার করতে দেওয়া হয়েছে। তবে সংস্কারের মূল কাজ এখনও শুরু হয়নি। কারণ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন- এখনও তারা টেন্ডার করতে পারেননি। পাশাপাশি নদীতে এখন পানি বেশি তাই কাজ শুরু করতে পারছেন না। মাসদুয়েকের মধ্যে এই টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হবে এবং আশা করছি এরমধ্যে নদীর পানিও কমে যাবে। তখন মূল সংস্কার কাজ শুরু হবে।