নতুন ছবি: কতটুকু দর্শক টানতে পারবে?
বিনোদন ডেস্ক
করোনা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। তাই প্রেক্ষাগৃহে ফিরছে সিনেমা। ক্রমেই ছবি মুক্তির সংখ্যা বাড়ছে। আগামী পবিত্র ঈদুল ফিতরে মুক্তির তালিকায় থাকছে অনেকগুলো ছবি। সবকিছু ঠিক থাকলে ছবি মুক্তিতে বিগত বছরগুলোকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে এবারের ঈদ উৎসব।
ছবি নির্মাণও শুরু হয়েছে পাল্লা দিয়ে। এফডিসি থেকে শুরু করে দেশের নানা প্রান্তে শুটিং হচ্ছে ছবিগুলোর। কিছু ছবির শুটিং শেষ হয়েছে। ‘জয় বাংলা’, ‘কুস্তিগির’, ‘জলরং’, ‘মায়া: দ্য লাভ’, ‘মাসুদ রানা’, ‘লোকাল’, ‘রাইটার’, ‘ট্র্যাপ’, ‘ফেসবুক’, ‘চাঁদনী’, ‘পরী তোমার জন্য’, ‘এক পশলা বৃষ্টি’, ‘প্রেমের কবিতা’, ‘বনলতা’, ‘যার নয়নে যারে লাগে ভালো’, ‘গিরগিটি’সহ আরও বেশ কিছু ছবির শুটিং চলছে। এ ছাড়া ‘নাকফুল’, ‘পাপ’, ‘যোদ্ধা’, ‘জল জোসনা’ ইত্যাদি ছবিগুলোর শিগগিরই শুটিং শুরু হবে।
চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন— ঢাকার চলচ্চিত্রের মন্দা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। অনেকগুলো ছবির কাজ হচ্ছে। এটি সুখবর। তবে এসব ছবির মধ্যে অনেক ছবিরই বাজেট অল্প। ফলে এসব ছবি প্রেক্ষাগৃহে কতটা দর্শক টানতে পারবে, তা দেখার বিষয়।
১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় ধাপের শুটিং শেষ হয়েছে জয় বাংলা ছবির। ৪ মার্চ শেষ ধাপের শুটিং শুরু হয়েছে গোপালগঞ্জে। একসঙ্গে অনেকগুলো ছবির শুটিং হওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এই ছবির পরিচালক কাজী হায়াৎ। তিনি বলেন— ‘এখানে দুটি বিষয় আছে। প্রথমত, অনেকগুলো ছবির কাজ হওয়াতে প্রেক্ষাগৃহে বেশি বেশি সিনেমা মুক্তির সুযোগ হবে। দ্বিতীয়ত, এসব সিনেমা থেকে জনপ্রিয় মুখ বের হয়ে আসতে পারে। তারকা তৈরি হতে পারে।’
কিন্তু করোনা–পরবর্তী এ সময়ে এসব সিনেমা নতুন করে প্রেক্ষাগৃহে দর্শক ফেরাতে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারে? এমন প্রশ্নে এই নির্মাতা বলেন— ‘এখন যেসব ছবি তৈরি হচ্ছে, তার মান কেমন হবে, ভালো কাস্টিং আছে কি না, এটিও বড় ব্যাপার। একটি ভালো ছবির জন্য দর্শকপ্রিয় শিল্পী থাকতে হয়। ভালো গান থাকতে হয়, নির্মাণ ভালো হতে হয়। শুনেছি, এখন অনেক ছবিই ২০ লাখ, ৩০ লাখ কিংবা ৪০ লাখ টাকায় তৈরি হচ্ছে। এত কম বাজেটের সিনেমা কতটুকু ভালো হবে! সেই সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে চলবে কি না, তা দেখতে দর্শক নতুন করে হলে ফিরবে কি না, বলা মুশকিল।’
৩ মার্চ কুমিল্লায় শেষ হলো কুস্তিগির ছবির শেষ ধাপের শুটিং। ছবিটি প্রসঙ্গে পরিচালক শাহীন সুমন বলেন— ‘আমরা ভালো ভালো শিল্পী নিয়ে কাজ করছি। গল্পটি মৌলিক এবং নতুনত্ব আছে। তা ছাড়া আমার দীর্ঘদিনের নির্মাণ অভিজ্ঞতা থেকে ছবিটি তৈরি করছি। বাজেট, লোকেশন—কোনো কিছুতেই ছাড় দিচ্ছি না। আমার বিশ্বাস, এই ছবি দর্শক হলে এসে দেখবেন। অল্পসংখ্যক হলেও হারানো দর্শক ফেরাবে ছবিটি।’
এক পশলা বৃষ্টি নামে একটি ছবির শুটিং শেষ করে বিরিশিরি থেকে ফিরলেন নায়ক কায়েস আরজু। তিনি জানান— এই ছবির বাজেট ৪০ লাখ হতে পারে। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, এই বাজেটে একটি ভালো সিনেমা বানানো কি সম্ভব? আরজু বলেন— ‘ছবির গল্প অনুযায়ী বাজেট ঠিক আছে। তবে বাজেট বেশি থাকলে আরও ভালো কাজ করা যেত। ছবিতে আরও গান থাকতে পারত। আরও ভালোভাবে শুটিং করে কাজ শেষ করা যেত।’
এমন সিনেমা কতটা দর্শক ফেরাতে পারবে প্রেক্ষাগৃহে? এই অভিনেতা বলেন— ‘আমরা অনেক আগে থেকে যে ধরনের সিনেমা দেখে আসছি বা এখন সারা পৃথিবীতে যে ধরনের সিনেমা দেখছি, সে অনুযায়ী এই বাজেটের সিনেমা খুব একটা দর্শক টানতে পারবে বলে মনে হয় না।’
তবে অনেকগুলো ছবির শুটিংকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন নির্মাতা মতিন রহমান। পাশাপাশি এই সময়কে ধরারও তাগিদ দিলেন তিনি। এই নির্মাতা বলেন— ‘আগের ধ্যানধারণা নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করলে হবে না। তবে সেই ধ্যানধারণায় কাজ যে কিছু হচ্ছে না, তা নয়। সেখান থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে হবে। এই মহামারিতে অনেক দর্শক প্রেক্ষাগৃহ থেকে সরে প্রযুক্তির কল্যাণে ওটিটিতে চলে গেছেন। তাই তাঁদের হলে ফেরাতে নির্মাণে অবশ্যই নতুন নতুন চিন্তাভাবনা যোগ করতে হবে। তা না হলে যতই সিনেমা নির্মাণ করি, অনুদান নিয়ে সিনেমা হল বাড়াই, লাভ হবে না। উল্টো আমরা আরও দর্শক হারাব।’
মতিন রহমান আরও বলেন— ‘বেশ কিছু তরুণ নির্মাতার ওটিটিতে কনটেন্ট দেখেছি। কী দারুণ নির্মাণ, কী দারুণ স্টোরি টেলিং। দেখে মুগ্ধ হয়েছি। এখন দরকার হবে এফডিসিকেন্দ্রিক যেসব পরিচালক প্রেক্ষাগৃহের জন্য ছবি নির্মাণ করছেন, তাঁদের বিশ্ব সিনেমা পর্যবেক্ষণ করে সিনেমা নির্মাণ করা।’