যার যা কিছু আছে, তা নিয়ে বাঁধে অবস্থানের আহ্বান
তাহিরপুর সংবাদদাতা
হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠা কাটছেই না কৃষকদের। গত এক সাপ্তাহের বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল নামছে সুনামগঞ্জে। এতে করে জেলার নদ-নদী ও হাওরে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পাহাড়ি ঢলের ঘোলা জলে নদ ভরে গেছে। যেন বর্ষার দৃশ্য।
সরজমিনে তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ৪৪নং ও দক্ষিন শ্রীপুর ইউনিয়নের ৫৩নং পিআইসি অবস্থা ভাল নয়। এছাড়াও কয়েকটি বাঁধে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়— ৪৪নং পিআইসি সময় মত কাজ করে নি। এর ফলে এখন ঝুকিঁর মুখে আছে। এই বাধেঁ ১৫ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫৪ টাকা বরাদ্ধ দিলেও সঠিক ভাবে কাজ না করায় বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে এবং অধিক ঝুকিঁর মুখে আছে। যে কোন সময় বাঁধটি ভেঙ্গে মাটিয়ার হাওরের ৮হাজার একর জমির ক্ষতির আশংকা রয়েছে বলে জানান স্থানীয় কৃষকগণ।
এদিকে, উপজেলার নদীর দুই পাড়ে ফসল রক্ষা বাঁধ বৃষ্টিতে বাঁধের বিভিন্ন স্থানে মাটি নরম, কাঁচা, কোথাও ফাটল, কোথাও চির ধরেছে। বিভিন্ন স্থানে ফসল রক্ষা বাঁধে ধস ও ফাটল দেখা দিয়েছে। দেখা গেছে— বাঁধের ঢালে ঘাস লাগানোর কথা থাকলেও অনেক স্থানেই ঘাস নেই। কোনো কোনো বাঁধে বস্তায় মাটি ভরে বাঁধে দিচ্ছে আবার কেউ কেউ ঘাস লাগানোর কাজ করছেন লোকজন। কিন্তু এই বাঁধের নির্মাণকাজের সময়সীমা ছিল ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ফলে উপজেলার মাটিয়ান হাওর, শনির হাওর, সমসার হাওরসহ সবকটি হাওরের ফসলই এখন ঝুঁকিতে আছে।
৪৪নং পিআইসি সভাপতি জিমিল মিয়া বলেন— আমি মাটির কাজ করে দিয়েছি। এখন অতিরিক্ত কাজ করছি। কবে কাজ শেষ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারী তারিখেই কত তারিখ তা বলতে পারেননি।
মাটিয়ান হাওরের কৃষক শরীফ মিয়াসহ অনেকেই বলছেন— যেভাবে পাহাড়ি ঢল নামছে, নদ-নদীর পানি বাড়ছে, এতে করে তাঁরা ২০১৭ সালের মতো পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন। বৃষ্টি ও ঢল না থামলে পানি উন্নয়ন বোর্ড যেসব বাঁধ দিয়েছে, তাতে ফসল রক্ষা হবে না। কারন বাঁধ নির্মাণ সময় মত হয়নি আবার রয়েছে অনিয়ম ও গাফিলতির অভিযোগ। এখনও ধান গুলো পাকে নি হাওরে পানি ডুকলে এই অবস্থায় ধান কাটাও যাবে না।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী— সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৫৪টি হাওরে এবার ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এতে ৩ হাজার ২২০ কোটি টাকার বোরো ধান উৎপাদিত হওয়ার কথা। এর মধ্যে চলতি বছরে তাহিরপুর উপজেলায় ৬৮টি পিআইসি ঘটন করা হয়েছে। এতে ৫৩ কিলোমিটার ফসল রক্ষা ডুবন্ত বেড়ী বাঁধ ও ১০টি খাল (ক্লোজার) বন্ধের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পে প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ১২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। বোরো জমি চাষ করেছেন কৃষকরা ১৭৪৯৫ হাজার হেক্টর। এথেকে চাল উৎপাদন হবে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। পাউবো সূত্রে জানা গেছে— এবার জেলার হাওরে ৭২৭ টি প্রকল্পে ১২১ কোটি টাকার ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে— ভারতের মেঘালয়, চেরাপুঞ্জিতে অতিবৃষ্টি হলেই ব্যাপক পরিমাণে পাহাড়ি ঢল নামছে সুনামগঞ্জে। গত ২৪ ঘন্টায় ১৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির জানান— আমি হাওরের বিভিন্ন বাঁধ পরিদর্শন করছি যেগুলো দুর্বল মনে হচ্ছে ও হাওরের বাঁধ উপছে পানি হাওরে প্রবেশ করার উপক্রম হয়েছে সেগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। আশা করি আল্লাহর রহমতে বাঁধগুলোর কিছুই হবে না। কঠোর নজরধারী রাখছি প্রতিটি বাঁধের দিকে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান— নজরখালী বাঁধ ভেঙে টাংগুয়ার হাওরে পানি প্রবেশ করায় অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখন উপজেলার প্রতিটি বাঁধে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। যে সকল পিআইসি আছেন তারা তাদের নিজ নিজ বাঁধ রক্ষায় সর্তক থাকার নিদের্শ দেন।
কৃষক, যুবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন— উড়া, কোদাল যার যা কিছু আছে, তা নিয়ে এবার হাওরের বাঁধ রক্ষায় বাঁধে অবস্থান করতে হবে। বাঁধে অনিয়মকারীদের কোন ছাড় দেয়া হবে না বলে হুশিয়ার করেন তিনি।
এদিকে, গত শনিবার সকালে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের নজরখালী বাঁধ ভেঙে টাংগুয়ার হাওরে থাকা দুটি উপজেলার ৫৪০ হেক্টর বোরো জমির ধান তলিয়ে যায়। পানি আরও বাড়লে সম্পূর্ণভাবে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।