অর্থবছর ২০২১-২২ : নয় মাসে রফতানি ৩৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য
সময় সংগ্রহ
চলতি অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই থেকে মার্চ) বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ থেকে ৩৮ বিলিয়নের বেশি বা ৩ হাজার ৮৬০ কোটি ৫৬ লাখ ৭০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি বেড়েছে বা প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। শুধু মার্চে পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৪ দশমিক ৮২ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
অর্থমূল্য বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া শীর্ষ তিন পণ্য পোশাক, পাট ও পাটজাত এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের মোট রফতানির ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশজুড়েই ছিল এ তিন পণ্য। এ আধিপত্য বজায় রয়েছে চলতি অর্থবছরেও। তবে মোট রফতানিতে বড় অবদান রাখা পণ্যের তালিকায় যুক্ত হয়েছে হোমটেক্সটাইল। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম নয় মাস শেষে পোশাক রফতানি বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। হোমটেক্সটাইল রফতানি বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিও বেড়েছে ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। তবে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি কমেছে ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে নিয়মিত রফতানি পরিসংখ্যান হালনাগাদ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ইপিবি। সম্প্রতি এর সর্বশেষ সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা যায়— চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে পোশাক রফতানির অর্থমূল্য ছিল ৩ হাজার ১৪২ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয় ২ হাজার ৩৪৮ কোটি ৭৯ লাখ ১০ হাজার ডলারের। এ হিসেবে রফতানি বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। মোট রফতানির ৮১ দশমিক ৪০ শতাংশই ছিল তৈরি পোশাক।
চলতি অর্থবছরের নয় মাসে ঘরে ব্যবহূত বস্ত্রপণ্য অর্থাৎ হোমটেক্সটাইল পণ্য রফতানি হয়েছে ১১৫ কোটি ৭৮ লাখ ৬০ হাজার ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছে ৮৪ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার ডলারের। এ হিসেবে হোমটেক্সটাইল পণ্য রফতানি বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি চলতি অর্থবছরের নয় মাসে হয়েছে ৮৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয় ৬৮ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পণ্য। এ হিসেবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি বেড়েছে ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
এদিকে পোশাক, হোমটেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি বাড়লেও কমেছে বাংলাদেশের সোনালি আঁশখ্যাত পাট ও পাটজাত পণ্যের। এ পণ্যের রফতানি চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চে ছিল ৮৮ কোটি ৭০ লাখ ৬০ হাজার ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয় ৯৫ কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার ডলারের। এ হিসেবে পণ্যটি রফতানিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে বা কমেছে ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
তবে রফতানির বর্তমান প্রবৃদ্ধি নিয়ে উচ্ছ্বসিত হওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করছেন রফতানি খাতসংশ্লিষ্টরা। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী— বাংলাদেশে তৈরি পণ্যগুলো রফতানির প্রধান গন্তব্য পশ্চিমা দেশগুলো। কভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাত কাটিয়ে দেশগুলোর বাজার চাঙ্গা হতে শুরু করেছিল। অনেক দিন নিষ্ক্রিয় থাকা বিক্রয় কেন্দ্রগুলো সক্রিয় হওয়ার পর চাহিদার উল্লম্ফনও দেখা গিয়েছিল, যার প্রতিফলন হিসেবে মোট রফতানিতে বড় প্রবৃদ্ধি দেখতে পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে এ প্রবৃদ্ধি টেকসই হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কারণ করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পশ্চিমা বাজারগুলোর চাহিদায় ভাটার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন— পশ্চিমা বাজারগুলোর চাহিদা বৃদ্ধির প্রতিফলন হিসেবে বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে এসেছে। এছাড়া করোনা মহামারীর মধ্যে সরকার রফতানি খাতে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করায় উদ্যোক্তারা সে ক্রয়াদেশ গ্রহণ করে সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে পেরেছেন। তাই সার্বিকভাবে রফতানি বেড়েছে। বর্তমানে পণ্য পরিবহনে খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখাটা চ্যালেঞ্জ হবে।
ইপিবির মাসভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে— সদ্য শেষ হওয়া মার্চে রফতানি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫৪ দশমিক ৮২ শতাংশ। রফতানি হয়েছে ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ২০ হাজার ডলারের পণ্য। গত বছরের মার্চে রফতানি হয় ৩০৭ কোটি ৬০ লাখ ৩০ হাজার ডলারের পণ্য।
সৌজন্যে : বণিক বার্তা