সুনামগঞ্জে আবারও বাঁধে ভাঙন: ডুবছে ফসল-কৃষকের স্বপ্ন
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার এরালিয়াকোনা হাওরে একটি বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে ফসল। একই সঙ্গে পাশের সন্ন্যাসী ও মিইট্টাডুবা হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনটি হাওরই তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের ভেতরে। এগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ নির্মাণের আওতায় নয়। স্থানীয় লোকজন তাঁদের নিজস্ব উদ্যোগে ছোট ছোট বাঁধ নির্মাণ করেন।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র সোম বলেন— উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন। এখানে কিছু ফসলের ক্ষতি হতে পারে। তবে এটি ধানি হাওর নয়।
এরালিয়াকোনা হাওর পারের মন্দিয়াতা গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক সানজু মিয়া বলেন— হাওরে ব্যাপকভাবে পানি বাড়ছে। আজ শুক্রবার সকালে প্রথমে বাঁধের পাশের কান্দা উপচে হাওরে পানি ঢোকে, পরে বাঁধটি ভেঙে যায়। এখানে বেশ কিছু জমিতে এবার বোরো ফসল আবাদ করা হয়েছে। আজকের মধ্যেই পানিতে পুরো হাওরের ফসল তলিয়ে যাবে। এই হাওরের পাশেই সন্ন্যাসী ও মিইট্টাডুবা হাওর। মাঝখানে ছোট কান্দা এরালিয়াকোনা হাওরকে আলাদা করেছে। তাই ওই দুটি হাওরও ডুবে যাবে। তিন হাওরে তিন হাজার একর জমি আছে।
পাউবো ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়— এক সপ্তাহ ধরে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জি থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের হাওরগুলো প্লাবিত হচ্ছে। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে জেলার সব হাওরের বোরো ফসল। গত শনিবার প্রথমে তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের একটি বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যায়। এরপর একে একে আরও হাওরের ফসলহানি ঘটে। এ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১১টি হাওরের বাঁধ ভেঙে ফসলহানি হয়েছে। পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত থাকায় এখন জেলার সব হাওরের ফসলই ঝুঁকির মুখে। অনেক বাঁধে ধস ও ফাটল দেখা দিয়েছে।
পাউবোর কর্মকর্তারা বলছেন— উজানের বৃষ্টিই ভয়ের মূল কারণ। সুনামগঞ্জে তেমন বৃষ্টি নেই। ঢল নামা অব্যাহত আছে। তবে আগের চেয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে— এবার জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৫০ হাজার ২২০ মেট্রিক টন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় বিভিন্ন হাওরে ফসলহানি হয়েছে ৪ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির। হাওর আন্দোলনের নেতারা বলছেন— ক্ষতির পরিমাণ ৮ থেকে ১০ হাজার হেক্টর হবে।