শ্রুতি বর্ষবরণ উৎসব সম্পন্ন : মাটির টানে ফিরে চলার বৃষ্টিস্মাত আহ্বান
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
পহেলা বৈশাখ বাঙালির সবচেয়ে বৃহত্তম সর্বজনীন উৎসব। সর্বস্তরের মানুষ হৃদয়ের টানে, বাঙালিয়ানার টানে মিলিত হয় এ উৎসবে। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে। করোনা ক্রান্তি শেষে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রুতির উদ্যোগে প্রতিবারের মত বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেয়।
বৃহস্পতিবার ব্লু-বার্ড স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণে সূর্যোদয়ের পর তুমুল বৃষ্টির মধ্যে শুরু হয় নতুন বছরকে বৃষ্টিস্নাত আহ্বান। মাটির টানে শিকরে ফিরে চলার উদাত্ত আহ্বান ধ্বনিত হয়। শ্রুতি সম্মাননা ১৪২৮ বাংলার গুণীজনের নাম প্রকাশ করা হয়। এবছর শ্রুতি সম্মাননা ১৪২৮ বাংলা পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী ডালিয়া আহমেদ।
অর্ধদিবস ব্যাপী শ্রুতির বর্ষবরণ আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন— সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিনহা। আরও উপস্থিত ছিলেন— নিরাজ কুমার জয়সওয়াল-সহকারী হাই কমিশনার-ভারতীয় হাই কমিশন সিলেট, ফয়সাল মাহমুদ উপ-পুলিশ কমিশনার, শেখ হিমাদ্রী শেখর রায় শাবিপ্রবি, আমিনুল ইসলাম লিটন সভাপতি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, শামসুল আলম সেলিম সদস্য কেন্দ্রীয় কমিটি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গৌতম চক্রবর্তী সাধারণ সম্পাদক সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেট, গৌতম দেব এস এম পি সিলেট, শ্রুতি সমন্বয়ক সুমন্ত গুপ্ত, কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আলী মাহমুদ প্রমুখ। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন— শ্রুতির সদস্য সচিব সুকান্ত গুপ্ত।
বৃষ্টি বিঘ্নিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন— তখন এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কৃষির, কারণ কৃষিকাজ ছিল ঋতুনির্ভর। এই কৃষিকাজের সুবিধার্থেই মুগল সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০/১১ মার্চ বাংলা সন প্রবর্তন করেন এবং তা কার্যকর হয় তাঁর সিংহাসন-আরোহণের সময় থেকে (৫ নভেম্বর ১৫৫৬)। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌরসনকে ভিত্তি করে বাংলা সন প্রবর্তিত হয়। নতুন সনটি প্রথমে ‘ফসলি সন’ নামে পরিচিত ছিল, পরে তা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত হয়।
বাংলা নববর্ষ পালনের সূচনা হয় মূলত আকবরের সময় থেকেই। সে সময় বাংলার কৃষকরা চৈত্রমাসের শেষদিন পর্যন্ত জমিদার, তালুকদার এবং অন্যান্য ভূ-স্বামীর খাজনা পরিশোধ করত। পরদিন নববর্ষে ভূস্বামীরা তাদের মিষ্টিমুখ করাতেন। এ উপলক্ষে তখন মেলা এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। ক্রমান্বয়ে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে পহেলা বৈশাখ আনন্দময় ও উৎসবমুখী হয়ে ওঠে এবং বাংলা নববর্ষ শুভদিন হিসেবে পালিত হতে থাকে।
অর্ধদিবসব্যাপী আয়োজনে সমবেত সংগীত এবং নৃত্য পরিবেশন করে অনুষ্ঠান আয়োজক শ্রুতি-সিলেট, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ সিলেট, গীতবিতান বাংলাদেশ, দ্বৈতস্বর, ছন্দনৃত্যালয়, সুরের ভূবন, ভাবুক, ললিত মঞ্জরী, প্রমা দেবী ও তার দল, নৃত্যাঞ্জলি, অনির্বান শিল্পী সংগঠন প্রমুখ।
একক সংগীত পরিবেশন করেন পার্থ প্রদীপ মল্লিক, খোকন ফকির,ইকবাল সাই, লিংকন দাশ প্রমুখ।