ধান ঘরে তুলে শঙ্কাহীন হাওর পাড়ের কৃষকরা
সময় সংগ্রহ
ক’দিন আগেও হাওরের খবর মানেই ছিলো শুধু শঙ্কা আর শঙ্কা। পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে ও পানি উপচে সুনামগঞ্জের ২০টি ছোট-বড় হাওরে পানি ঢুকে তলিয়ে গিয়েছিলো কয়েক হাজার কৃষকের পাঁচ সহস্রাধিক হেক্টর ধানী জমি।
তবে, শান্তিগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা মোটামুটি নির্দ্বিধায়, নির্বিঘ্নে ঘরে তুলেছেন তাঁদের সোনালী ফসল। উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ার একটা শঙ্কা তৈরি হলেও প্রকৃতির স্থিতিশীল অবস্থা, নদীর পানি কমতে থাকা ও জনপ্রতিনিধি-প্রশাসন, কৃষকদের বাঁধ রক্ষায় পরিশ্রমের ফলে তখন রক্ষা পেয়েছিলো হাওরগুলো।
এ উপজেলার কিছু জায়গায় নদীর পাড় উপচে হাওরে পানি ঢুকলেও কৃষকরা সম্মিলিতভাবে কাজ করে তা রুখে দিয়েছেন। আর ছোট ছোট যে দু’টি হাওরে পানি ঢুকেছে সে হাওরগুলো থেকেও কষ্ট করে ধান সংগ্রহ করেছেন অনেক কৃষক। দু’একটি ছোট হাওরের কথা বাদ দিলে মোটামুটি শঙ্কাহীনভাবেই কষ্টের ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন এ উপজেলার কৃষক-কৃষাণীরা। এতে বেজায় খুশি তারা। এছাড়াও, উপজেলার কৃষি বিভাগ ধান তুলার যে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছিলো তার বেশি ধান তুলা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়— এ বছর ২২ হাজার ২২৫ হেক্টর ধান তুলার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছিলো কৃষি বিভাগ। তাদের হিসাব অনুযায়ী ৭ মে পর্যন্ত লক্ষমাত্রা পূরণ হয়ে আরো ১০/২০ হেক্টর ধান বেশি তুলা হয়েছে। যেসব ধান শেষের দিকে রোপন করা হয়েছিলো তেমন কিছু ধান এখনো কাটা চলছে। তবে, চিন্তার কোনো কারণ নেই, এখন পানি আসার কোনো আশঙ্কা নেই। যে ধান এখনো মাঠে রয়েছে এগুলো তুলা হলে আরো বেশি ধান সংগ্রহ হবে।
কৃষি বিভাগ জানায়— সারা জেলায় হাওরের ধান নিয়ে একটি শঙ্কার তৈরি হয়েছিলো। কিছু হাওর তলিয়েও গেছে। শান্তিগঞ্জের প্রত্যেকটা হাওর রক্ষা বাঁধ অক্ষত রয়েছে। ছোট ছোট দুটি হাওরে পানি প্রবেশ করেছে ‘ওভার ফ্লো’ হয়ে৷ এতে সর্বোচ্চ ৫০ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এসব জমি থেকেও কৃষকরা যতটুকু পারেন ধান সংগ্রহ করেছেন। লক্ষ মাত্রা পূরণ হওয়া খুশি উপজেলার সাধারণ কৃষক-কৃষাণী ও কৃষি বিভাগ।
দেখার হাওরের কৃষক আবদুল জলিল জানান— নদীতে যে হারে পানি বাড়ছিলো মনের মাঝে ভয় ঢুকে গিয়েছিলো ধান তুলতে পারবো কিনা। আমি ৪ একর জমি চাষ করেছিলাম। সব ধান তুলে নিয়েছি। এখন মনটা খুব শান্তিতে আছে। আল্লাহর শুকরিয়া।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাজেদুর রহমান বলেন— আমরা এবছর যে লক্ষা মাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম তা পূরণ হয়েছে। আরো বেশি ধান উৎপাদন হয়েছে। অনেক শঙ্কার মধ্য দিয়ে আমরা দিন পার করেছি। হাওর পাড়ে কৃষক, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ সকলেই আন্তরিকভাবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহযোগিতা করেছেন। এজন্য শান্তিগঞ্জ কৃষি ডিপার্টমেন্ট কৃষকদের পক্ষ থেকে সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। এখনো কোনো জায়গায় সামান্য ধান কাটা হচ্ছে। এগুলো শেষের দিকে রোপন করা হয়েছিলো। পানিতে আমাদের উপজেলার সর্বোচ্চ ৫০ হেক্টর জমি হয়তো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার উজ্ জামান বলেন— আমাদের লক্ষ মাত্রা পূরণ হয়েছে এতে আমরা খুশি। যাঁদের ধান পানিতে তলিয়ে গেছে তাঁদেরকে আমরা সহযোগিতা করবো।