দেশের আর্থিক পরিস্থিতিতে অশনি সংকেত দেখছে বিএনপি
সময় সিলেট ডেস্ক
দেশের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব বলছেন— আগামী পাঁচ থকে আট মাসের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শেষ হবার শঙ্কা আর ডলারের বাজার অস্থির হওয়াকে ‘অশনি সঙ্কেত’ হিসেবে দেখছেন তিনি।
এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বড় প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন— বর্তমান গণস্বার্থ বিরোধী ফ্যাসিস্ট সরকার তাদের ব্যক্তিগত অর্থের ঝোলা ভর্তি করতে অনেকগুলো অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।
দেশের সবশেষ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে মঙ্গলবার বৈঠকে বসে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। বৈঠকে অর্থনীতিবিদ পরামর্শও নেন দলটির নেতারা। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে বুধবার (১৮ মে) গুলশানে দলীয় চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে আসেন বিএনপি মহাসচিব।
এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন— বাংলাদেশের বর্তমান যে অর্থনৈতিক অবস্থা সেটাকে বিএনপি অশনি সংকেত মনে করে। অদূর ভবিষ্যতে দেশ যে শ্রীলংকার মতো বিপদে পড়তে পারে তার আশঙ্কাও বিএনপির মধ্যে রয়েছে। সেই আশঙ্কাকে বাস্তবভিত্তিকই বলা যেতে পারে।
তিনি বলেন— বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রুপ্তানি এবং রেমিট্যান্স আয়ে ঘাটতির কারণে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে।
টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে অসহনীয় হয়ে উঠেছে জিনিসপত্রের দাম। মনে হচ্ছে আগামী দিনে পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে উঠবে। রিজার্ভ নিয়ে আত্মতুষ্টির কিছু নেই। এটি দ্রুত কমে আসছে। গত আট মাসে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে বলে যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
গেলো এক যুগের মধ্যে এই প্রথম বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বোচ্চ চাপের মধ্যে পড়েছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন— পরের দুই মাসে এটা আরও চার বিলিয়ন ডলার কমে যাবে। এভাবে যদি রপ্তানির তুলনায় আমদানি বাড়তে থাকে এবং সেটা যদি রেমিট্যান্স দিয়ে পূরণ করা না যায় তাহলে অতি দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভ শেষ হয়ে যাবে।
এই মুহূর্তে যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে মাত্র পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন— আমদানি ব্যয় আমাদের বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। আমদানি যে হারে বেড়েছে, রপ্তানি সে হারে বাড়েনি। আবার প্রবাসী আয়ও কমে গেছে। ফলে প্রতি মাসে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।
ফখরুল বলেন— সরকার ৬ দশমিক ২২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির কথা বলছে। কিন্তু এটি বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। শহরের চেয়ে গ্রামের মূল্যস্ফীতি গ্রামে বেশি। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের চেয়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেশি। অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ১২ শতাংশ।
তিনি আরও বলেন— রিজার্ভ বিপদজনক পর্যায়ে চলে আসার কারণে টাকার দামও কমছে। সব কিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। ক্রেতা সাধারণের ত্রাহি অবস্থা। সিন্ডিকেটের তাণ্ডবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিশেষ করে পাম, সয়াবিন তেলের দাম অনেক বেড়ে গেছে। শুধু তাই নয়, ভরা মৌসুমে চালের দাম যেখানে সবসময় স্বাভাবিক নিয়মে কমে যায় সেখানে বেড়ে গেছে।
ফখরুলের দাবি মোটা অঙ্কের কমিশনের লোভে আওয়ামী লীগের নেতা মন্ত্রীরা ব্যয়বহুল প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। এমন বেশ কিছু প্রকল্পের নাম উল্লেখ করে সেসব বাতিলের দাবি জানান ফখরুল। তিনি বলেন— মেগা প্রকল্প মানেই মেগা দুর্নীতি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন— অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্পগুলো মধ্যে রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে যশোর ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি হয়ে কক্সবাজার ও ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প অন্যতম।
পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বুলেট ট্রেন, দ্বিতীয় পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, পূর্বাচলে ১১০ তলা বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু বহুতল ভবন কমপ্লেক্স, শরীয়তপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, পাটুয়ারি-দৌলতদিয়া দ্বিতীয় পদ্মা সেতু, নোয়াখালী বিমানবন্দর, দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প এবং ঢাকার বাইরে রাজধানী স্থানান্তর এই আটটি সরকারের সম্ভাব্য প্রকল্পকে ‘গ্ল্যামারাস’ প্রকল্প হিসেবে অভিহিত করে এসব প্রকল্প বন্ধের দাবিও জানিয়েছে বিএনপি।