সিলেটে ৩৫টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অবৈধ-সিলগালা
সময় সিলেট ডেস্ক
সিলেট নগরীতে দু’টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা ও একটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রবিবার বিকেলে স্বাস্থ্য বিভাগ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে এগুলো বন্ধ ও সীলগালা করে। এ নিয়ে দু’দিনে সিলেট বিভাগে অবৈধভাবে কার্যক্রম চালানোর দায়ে ৩৫টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হল।
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত জানান— রবিবার বিকেলে নগরীর দরগাগেইট এলাকায় বৈধ কাগজপত্র না থাকায় আশ-শেফা নামক একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয় এবং রিকাবীবাজারস্থ স্টেডিয়াম মার্কেটে সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে সীলগালা করা হয়।
এছাড়া রবিবার সিলেট নগরী ছাড়াও বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ মৌলীবাজারের জুড়ি ও হবিগঞ্জের বাহুবলসহ বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালায় স্বাস্থ্য বিভাগ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান— হবিগঞ্জ জেলায় টানা দুই দিন অভিযান চালিয়ে ১৮টি অনিবন্ধিত বেসরকারি হাসপতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শনি ও রবিবার জেলার বিভিন্ন স্থানে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযানে এসব অনিবন্ধিত হাসপাতাল ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হয়।
রবিবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. নূরুল হক। তিনি বলেন— যে সব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বৈধ কাগজপত্র নেই বা অনিবন্ধিত সেগুলো অভিযানের মাধ্যমে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কয়েকটি হাসপাতাল-ক্লিনিকের মালিকদের বন্ধের পাশাপাশি জরিমানাও করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন আরও বলেন— জেলার কোথাও অনিবন্ধিত ক্লিনিক-হাসপাতালের কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
যেসব হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ করা হয়েছে, সেগুলো হলো— শায়েস্তাগঞ্জ পিপলস মেডিকেল সার্ভিসেস, চুনারুঘাট সূর্যের আলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার, এমকে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, গ্রিন লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ঢাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ঢাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টার মাধবপুর, মাধবপুর তিতাস মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল, মাধবপুর সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
এছাড়াও মাধবপুর প্রাইম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মাধবপুর এপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হবিগঞ্জ সদরের রোকেয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সিটি চক্ষু হসপাতাল, স্বাস্থ্যসেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডা. সানি কনসালটেশন সেন্টার, শায়েস্তাগঞ্জ এপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাহুবল নিউ জেনারেল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডক্টরস হসপিটাল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. বেলাল হোসেন জানান— রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদেশে ৮৮২টি অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়েছ।
এর মধ্যে ঢাকায় ১৬৭টি, চট্টগ্রামে ২২৯টি, রাজশাহীতে ৭৮টি, রংপুরে ১৪টি, ময়মনসিংহে ৯৬টি, বরিশালে ৫৯টি, সিলেটে ৩৫টি এবং খুলনায় ২০৪টি অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে।
বেলাল হোসেন বলেন— অবৈধ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে আমরা তিন দিন সময় দিয়েছিলাম। রবিবার শেষ সময়। তবে আমাদের অভিযান আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে। যাতে করে অনিবন্ধিত ও অনিয়মের দায়ে দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানগুলো আবার গড়ে না ওঠে সে জন্য অভিযান চলমান রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।
গত ২৬ মে ডা. মো. বেলাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন— দেশের সব অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই সময়ের পর নিবন্ধনহীন কোনো ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যারা সিদ্ধান্ত মানবে না, তাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবেন জানতে চাইলে সে সময় তিনি বলেন— যেসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেনি, সেগুলো অবৈধ। আমাদের বেঁধে দেয়া সময়ের পর যদি নিবন্ধনহীন কেউ কার্যক্রম পরিচালনা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। মূলত এরপরই অভিযান শুরু হয়।
গত ২৫ মে দেশের অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় দেশের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর মনিটরিং ও সুপারভিশন বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।