র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত
সময় সিলেট ডেস্ক
জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবাধিকার আইন মেনে চলা ছাড়া র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ শর্তের কথা বলেন তিনি।
পিটার হাস বলেন— ‘র্যাবের ওপর অভিযোগের সুরাহায় সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা ও বাহিনীটিকে জবাবদিহির আওতায় আনার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। জবাবদিহি ছাড়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। র্যাবকে মানবাধিকার আইন মেনে চলতে হবে।’
সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র র্যাবকে কার্যকর একটি বাহিনী হিসেবে দেখতে চায় বলে জানান এই রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন— ‘আমরা বাংলাদেশে অপর্যাপ্ত শ্রম অধিকার ও খারাপ কর্ম পরিবেশ নিয়েও জ্ঞাত।’
গত বছরের ১০ ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে পৃথকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে পিটার হাস আরও বলেন— ‘বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র, যা হবে আন্তর্জাতিক মানের, বাংলাদেশের জনগণের যে নির্বাচনে তাদের নেতৃত্ব নির্বাচনের সামর্থ্য থাকবে।’
তিনি বলেন— ‘বাংলাদেশকে এ ধরনের নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এ দেশে এমন একটি নির্বাচন হতে হবে, যে নির্বাচনে বাংলাদেশ সরকার, জনগণ, এ দেশের গণমাধ্যম, এ দেশের নাগরিক সমাজ নিশ্চিত করবে যে এটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী দেশটি মানবাধিকার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপস করবে না বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
তিনি বলেন— বাইডেন প্রশাসনের মূল বিষয় হচ্ছে মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র এসব বিষয়ে কোনো ছাড় দেবে না। ভয়ভীতিহীন সাংবাদিকতা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় উৎসাহ দিয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো ও কাছের বন্ধু হিসেবে আখ্যা দেন পিটার হাস।
তিনি বলেন— ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্র। ৫০ বছর আমরা একসঙ্গে ছিলাম। আমাদের ভালো সম্পর্ক আগামী ৫০ বছরও অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র আগামী ৫০ বছরে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে কাজ করে যাবে, যেভাবে গত ৫০ বছর কাজ করে গেছে।’
আগামী ২ জুন ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অর্থনীতি বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের সংলাপ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত জানান— ২ জুন ওয়াশিংটনে দুই পক্ষের মধ্যে অর্থনীতি বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের সংলাপ অনুষ্ঠান হবে। সেখানে শ্রম অধিকার গুরুত্ব পাবে।
তিনি জানান— বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পাওয়া এবং উন্নয়নবিষয়ক তহবিল থেকে আর্থিক সুবিধা পেতে হলে পূর্ণাঙ্গ শ্রম অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বাস্তবায়ন করতে হবে।
এ সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়েও কথা বলেন পিটার হাস। তিনি বলেন— ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যে উদ্বেগ রয়েছে, সেগুলো সমাধানে আমরা আলোচনা চালিয়ে যেতে চাই।’
ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ডিকাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনউদ্দীন বক্তব্য দেন।